জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ২শ’ কোটি ব্যবহারকারী সাইটটিকে কী পোস্ট করতে পারবে আর কী পারবে না, তা ঠিক করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি যে নীতিমালা আর গাইডলাইন ব্যবহার করে, প্রথমবারের মতো তা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যে বিশ্বজুড়ে এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টের ভূমিকা এবং নৈতিকতা নিয়ে নানারকম প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।
গার্ডিয়ান জানায়, তারা ফেসবুকের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি শতাধিক ট্রেনিং ম্যানুয়েল, স্প্রেডশিট এবং ফ্লো-চার্ট পেয়েছে। সহিংসতা, হেট স্পিচ (অন্যের সম্পর্কে ঘৃণাসুলভ অপমানকর মন্তব্য), সন্ত্রাসবাদ, পর্নোগ্রাফি, বর্ণবাদ এবং নিজের ক্ষতি করার মতো কনটেন্ট ফেসবুক কীভাবে মোকাবিলা করবে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
এমনকি ম্যাচ ফিক্সিং এবং মানুষের মাংস খাওয়ার মতো বিষয়েও ফেসবুকের নির্দেশিকা রয়েছে সেখানে। প্রকাশিত নথিগুলোকে গার্ডিয়ান নাম দিয়েছে ‘ফেসবুক ফাইলস’।
নথিগুলো ফাঁসের মধ্য দিয়ে ফেসবুকের তৈরি কোড এবং নিয়মাবলী প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে এলো। ইতোমধ্যেই এগুলো ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশাল রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে।
শুধু নীতিমালা নয়, ‘রিভেঞ্জ পর্ন’ বা প্রতিশোধমূলক পর্ন জাতীয় কনটেন্ট প্রকাশের মতো নতুন চ্যালেঞ্জগুলোয় ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমটির নির্বাহীরা যে কতটা হিমশিম খাচ্ছেন, ফেসবুক ফাইলসে তার বর্ণনা দেয়া রয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ফেসবুকের মডারেটররা অতিরিক্ত কাজের চাপে ভীষণ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন। প্রায়ই কোনো একটি পোস্ট সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে – সে সিদ্ধান্ত নিতে তারা সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ড সময় পান!
নাম উল্লেখ না করা এক সূত্রের বরাতে গার্ডিয়ান জানায়, নিজস্ব কনটেন্টের ওপর ফেসবুক কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। ওয়েবসাইটটি খুব অল্প সময়ে খুব বেশি বড় হয়ে গেছে বলে সূত্রটির দাবি।
নথিগুলো বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওই ফাইলগুলোতেই দেখা গেছে, অনেক মডারেটরই বেশকিছু নীতিমালার পরস্পর বিরোধিতা এবং উদ্ভট বৈশিষ্ট্যের কারণে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। যে বিশেষ করে যৌনতা সংশ্লিষ্ট কনটেন্টগুলো সবচেয়ে বেশি জটিল এবং বিভ্রান্তিকর।
নীতিমালার পরস্পর বিরোধিতায় সৃষ্ট বিভ্রান্তির সাধারণ একটি উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, কোনো ব্যক্তি রাগের মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার কথা বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলে। অথচ একজন সাধারণ মানুষকে একইভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে পোস্ট দিলে সেটাকে ‘বিশ্বাসযোগ্য হুমকি’ মনে না করে বাতিল করে দিচ্ছে ফেসবুক।
ফাঁস হওয়া নথিগুলোর একটিতে বলা হয়েছে, ফেসবুক মাত্র এক সপ্তাহে ৬৫ লাখেরও বেশি ভুয়া অ্যাকাউন্ট বিষয়ক রিপোর্ট রিভিউ করে।
হাজারো স্লাইড আর ছবিযুক্ত ফেসবুকের নীতিমালা নিয়ে এখন আরও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সমালোচকরা, যারা আগে থেকেই বলছিলেন, ফেসবুক এখন শুধু সামাজিক মাধ্যম নয়, এটি একটি প্রকাশনা মাধ্যমে পরিণত হয়েছে এবং বিদ্বেষমূলক ও আঘাতকারী কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে এর আরও বেশি কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে বাক-স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্ট ও আইনজীবীদের মাঝেও এর ফলে আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। কেননা তাদের মতে, ফেসবুক সময়ের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেন্সরে পরিণত হয়েছে। তবে সমালোচক এবং বাক-স্বাধীনতা অ্যাক্টিভিস্ট – দু’পক্ষই ফেসবুক ফাইলসের প্রকাশিত তথ্যগুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছতা দাবি করছেন।