নিজেদের জিহাদী প্রমাণ করতে যেসব মানুষগুলো দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সিরিয়ায়। তারা এখন হারাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গও। ঘরছাড়া এসব মানুষগুলোর পরিবারেরই বক্তব্য, বোমাতেই তাদের মৃত্যু হওয়া উচিত।
গত বছরের মে মাস থেকেই তারা একটু একটু করে উধাও হওয়া শুরু করে ভারতের বেশকিছু পরিবারের মানুষ। তারা কেউ একা নিখোঁজ আবার কেউ পরিবার সমেত। সবার মনে যেন হুট করে সন্দেহ তৈরি না হয় সেজন্য কেউ কেউ আবার মাত্র দুই তিনজন করে একে একে নিখোঁজ হতে থাকে।
সবারই গন্তব্য সিরিয়া। কিছু সময় পরে নিখোঁজদের পরিবার টের পায় যে তাদের প্রিয়জনের আর খোঁজ মিলছে না। এসব নিখোঁজদের কেউ কেউ যেমন একা গেছেন, কেউ নিয়ে গেছেন স্ত্রীকে। আবার কারো কারো সঙ্গে ছিলো অবুঝ শিশুও। নিজেদের আরাম আয়েশ করার মতো বাংলো এবং ডাক্তার ও ব্যবসায়ীর মতো ভালো কাজ ছেড়েও বিপথে পা বাড়িয়েছেন কেউ কেউ। শুধুমাত্র আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ার জন্য।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ধারণা কেরালার অন্তত ১৯ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ও বাচ্চারা মিলে নানগড়হর প্রদেশে স্থায়ী হয়েছে। সেটার পাশেই পাকিস্তানের পাহাড়ী বর্ডার। এমনভাবে ভারতীয়দের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় যেমন আইএসের তৎপরতা নিয়েও কথা চলছে তেমনই, ভারতের কেরালাতেও যে আইএস তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে সেই কথাও এসেছে।
আইএসের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের মধ্যে দুই জন নানগড়হর-এ ১১ এপ্রিল ড্রোন হামলায় মারা গেছে বলেও জানা যায়। এরপর ১৩ এপ্রিল আমেরিকার সেনারা একটি ‘সব বোমার মা বোমা’ বিষ্ফোরণ করে আফগানিস্তানের একটি গুহার আশেপাশে। সেখানে কিছু ভারতীয় জঙ্গি লুকিয়ে ছিলেও বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক হামলায় নিহত ৯৪ জনের মধ্যে ১৩ জন ভারতীয়ও ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা সবাই কেরালার বাসিন্দা ছিলো কিনা সেটা জানা যায়নি।
এভাবে বোমা হামলায় নিহতের খবর শুনে নিখোঁজদের পরিবারের বক্তব্য, বোমাতেই তাদের মারা যাওয়া উচিত।
৬৬ বছর বয়সী আব্দুল রহমান হামজা। তার সন্তান ছিলো পেশায় ডাক্তার। আরেক সন্তান ছিলো স্কুলের কর্মী। সে সিরিয়ায় যাওয়ার সময় তার সঙ্গে গর্ভবতী স্ত্রী ও ২ বছরের সন্তানকেও নিয়ে গেছে। আব্দুল রহমান বলেন, ওরা যেটা করছে সেটা ইসলাম নয়। ইসলাম কখনো সন্ত্রাসবাদকে প্রভাবিত করে না।
সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলছে এরই মধ্যে অন্তত ১০০ জন ভারতীয় ঘর ছেড়েছে সিরিয়ায় যাওয়া উদ্দেশ্যে।
নিজের সন্তানদের নিয়ে তো বটেই সন্তানদের সঙ্গে থাকা ছোট্ট শিশুগুলোর জীবন নিয়েও উদ্বিগ্ন আব্দুল রহমান হামজার স্ত্রী হাফসাথ। তিনি বলেন, তাদের ধর্মীয় শিক্ষা তাদের এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কে জানে কেন তারা এমন পথ বেছে নিলো। আমার খুবই রাগ হচ্ছে, কিন্তু চাই ওরা ফেরত আসুক।