চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার দাফন করা হবে আব্দুল জব্বারকে

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী, গত শতকের ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বারকে আগামীকাল ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে বেলা ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আব্দুল জব্বারের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। আর বাদ জোহর জানাজা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। এমনটাই জানা গেছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে।

আরও জানা গেছে, আজ সকালে আব্দুল জব্বারের মরদেহ মোহাম্মদপুর বাবর রোডে নিয়ে যাওয়া হয় কাফন করানোর জন্য। সেখান থেকে রাজধানীর ভূতের গলিতে নিজ বাসায় আনা হবে তাকে। পরে বারডেম হাসপাতালের শবহিমাঘরে রাখা হবে মরদেহ।

এদিকে আব্দুল জব্বারের শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁকে যেন কুষ্টিয়া সদরের আরুয়াপাড়ায় তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে আব্দুল জব্বারকে।

আজ ৩০ আগস্ট বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আব্দুল জব্বার কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

আব্দুল জব্বারের মৃত্যুর খবর শুনে সকালে হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘আব্দুল জব্বারের স্মৃতি আর তার গান সংরক্ষণের জন্য সব ধরণের উদ্যোগ নেবে সরকার।’

পরে হাসপাতালে আসেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সহানুভূতি জানান।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু
হাসপাতালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের গায়ক আব্দুল জব্বার মুক্তিযুদ্ধের সময় হারমোনিয়াম নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই দুঃসময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই শিল্পীর গাওয়া গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে।

ওই সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসংগীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকা তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেন তিনি। অসংখ্য কালজয়ী গানে কন্ঠ দেন আব্দুল জব্বার।

হাসপাতালে আসেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর
হাসপাতালে আসেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর

সংগীতে অসামান্য অবদানের সীকৃতি স্বরূপ আব্দুল জব্বারকে ১৯৮০ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।

আবদুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে তাঁর গান গাওয়া শুরু। তিনি ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সংগম’-এর গানে কণ্ঠ দেন।

১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে সত্য সাহার সুরে তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ গানটি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬৮ সালে ‘পিচ ঢালা পথ’ ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে ‘পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’ এবং ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে ‘সুচরিতা যেয়ো নাকো আর কিছুক্ষণ থাকো’ গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

লেখা ও ছবি: আসিফ রহমান খান