সাভারে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন নিহতের বাবা। নিহত দিল আফরোজ দিবা (২২) সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।
স্বামী ফিরোজের পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার ফলে মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ময়না তদন্ত করা ডাক্তার প্রদীপ বিশ্বাসের সঙ্গে ফিরোজের পরিবার যোগাযোগ করে ময়না তদন্তের ফলাফল বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিবার বাবা দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমার মেয়েটাকে ওরা মেলে ফেলছে। কাল (শনিবার) দুপুর একটার দিকে ফিরোজের বাবা ফোন করে জানায় আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি লাশ সেখানে নেই। লাশ আনা হয়েছে ফিরোজের বাড়িতে। মেয়ের শরীরে নির্যাতনের দাগ। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। ফিরোজ তাকে হত্যা করেছে।’
মেয়ে জামাই ফিরোজকে লাশের সঙ্গে কোথাও দেখা যায়নি। আজ দুপুরে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেনি এবং বিকেল থেকে ফিরোজের ফোন বন্ধ আছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সাভার থানা পুলিশ মামলা নিতে চাইছে না। এছাড়া ফিরোজের পরিবার থেকে ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
সাভার থানা পুলিশ এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। চ্যানেল আই অনলাইনকে সাভার থানার ওসি মহাসিনুল কাদির বলেন, ‘মামলা নিব না কেন? অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে। তারাই বলেছে রবিবার সন্ধ্যায় লাশ দাফন করে মামলা করবে। আমরা ফিরোজের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। সে স্ত্রীকে নির্যাতন করতো শুনেছি। মামলা হলেই অ্যাকশনে নামা হবে। আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’
উক্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে দিবার বাবা সন্ধ্যায় মামলা করবেন বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান।
দিবার বোন সাদিয়া জান্নাত চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘২০১৬ সালের মে মাসে ফিরোজের সাথে আমার বোনের বিয়ে হয়। ভালোবেসে নিজেরা বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই ওরা আলাদা বাসা নিয়ে বসবাস করছিল। আপুর পড়াশুনার খরচ আব্বু দিতেন। তারপরও আপুকে তৃতীয় বর্ষের ফরম ফিলআপ করতে নিষেধ করে ফিরোজ। এ নিয়ে আপু ও ফিরোজের মাঝে ঝগড়া হয়। মাঝে মাঝে আপুর গায়ে হাত তুলতো।’
তিনি বলেন, ‘ গতকাল দুপুরে আপুর শ্বশুর আব্বুকে ফোন করে জানায় আপু আত্মহত্যা করেছে। আব্বু হাসপাতালে গিয়ে দেখে লাশ নেই। আপুদের ভাড়া বাসাতেও লাশ নেই। ফিরোজের বাবার বাড়ি (আপুর শ্বশুর বাড়ি) গিয়ে দেখা যায় লাশ মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়েছে।’
দিবাকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে সাদিয়া বলেন, ‘গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করলে হাত ঝুলে থাকে। কিন্তু আপুর হাত বাঁকা হয়ে আছে। তার গায়ে কালো কালো দাগ। শরীর কালো হয়ে গেছে। বুকে চাপ লাগার দাগ।’
দিবার স্বামী ফিরোজের বাবা সাদিকুর রহমানের ফোনে কল দিলে ফিরোজের দূরসম্পর্কের বোন পরিচয় দিয়ে নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘ফিরোজের বাবা নামাজ পড়ছেন। কথা বলতে পারবেন না।’ এর বিশ মিনিট পরে ফোন দিলে একই মহিলা ফোন ধরে ফিরোজের বাবা অসুস্থ, কথা বলতে পারবে বলে জানান। ফিরোজের দুঃসম্পর্কের এই বোন দাবি করেন দিবা আত্মহত্যাই করেছে। লাশ ফিরোজ-দিবার বাসা থেকে শ্বশুর বাড়ি আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে নিলে যখন মৃত ঘোষণা করে তখন ভাড়া বাসায় লাশ নিয়ে গেলে সেই বাড়িওয়ালা লাশ বাসায় তুলতে নিষেধ করেন। ফলে লাশ দিবার শ্বশুর বাড়ি আনা হয়।’
ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে দিবার ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার প্রদীপ বিশ্বাসকে ফোন দিলে তিনি মোবাইলে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি সরাসরি দেখা করতে বলে ফোন কেটে দেন। এরপর আর ফোন রিসিভ করেন না।
আগামীকাল সোমবার দিবা হত্যার বিচারের দাবিতে সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব বন্ধনের ডাক দিয়েছে দিবার সহপাঠীরা।