র্যানসামওয়্যার ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী শুক্রবারের ভয়াবহ সাইবার হামলার সঙ্গে নর্থ কোরিয়ার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তবে আপাতত পাওয়া তথ্য থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া সম্ভব নয় বলেও তারা জানিয়েছেন।
প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এবং হ্যাকিংয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন কোডের চিহ্ন বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক হামলাটিতে ‘ল্যাজারাস গ্রুপ’ নামের একটি হ্যাকিং চক্রের হাত থাকতে পারে। চক্রটি মূলত চীন থেকে সক্রিয় থাকলেও নর্থ কোরিয়ার পক্ষ থেকেই হামলার কাজ করে থাকে।
২০১৪ সালে সনি পিকচার্স-এর সার্ভারে ধ্বংসাত্মক হামলা এবং গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির জন্য বহুবার এই সুদক্ষ ল্যাজারাস গ্রুপকেই দায়ী করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বর্তমানে অতি সাবধানতার সঙ্গে শুক্রবারের হামলাটির সঙ্গে ল্যাজারাস গ্রুপের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছেন।
টেক জায়ান্ট গুগলের নিরাপত্তা গবেষক নীল মেহতার একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কারের পর নর্থ কোরিয়া ইস্যুতে তাদের টনক নড়ে।
সাইবার হামলাটির জন্য ওয়ানাক্রাই নামের যে র্যানসামওয়্যার সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি তার কোডের সঙ্গে নীল ল্যাজারাস গ্রুপের আগে করা বেশ কিছু হ্যাকিংয়ের কোডের মিল পেয়েছেন।
তবে এই প্রমাণটি নর্থ কোরিয়াকে সরাসরি দায়ী করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এর সঙ্গে আরও অনেক সূত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর অ্যালান উডওয়ার্ড ই-মেইলের মাধ্যমে বিবিসি’কে এমনই কিছু সূত্র সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।
তিনি জানান, ওয়ানাক্রাইয়ের মূল কোডটি ছাড়ার সময়ের টাইমস্ট্যাম্পে দেখা গেছে, এর টাইমজোন গ্রিনিচ মান সময়+৯, অর্থাৎ চীনের টাইমজোন।
শুধু তাই নয়, একেকটি কম্পিউটার বা সার্ভার দখলের পর ওয়ানাক্রাই তথ্য ফিরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবির জন্য যে বক্তব্য বা টেক্সটটি দেখায়, সেটার ইংরেজি অংশটি পড়লে অনেকটা অন্য ভাষা থেকে কম্পিউটারে অনুবাদকৃত ইংরেজি ভাষার মতো মনে হয়। আর চীনা ভাষায় লেখা অংশটি পড়লে মনে হয়, সেটি একজন চীনা ভাষাভাষীই লিখেছে।
এই প্রমাণগুলো খুবই সূক্ষ্ম এবং পরিস্থিতি নির্ভর উল্লেখ করে প্রফেসর উডওয়ার্ড বলেছেন, নিশ্চিতভাবে প্রমাণের জন্য আরও বেশি অনুসন্ধান প্রয়োজন। ইতোমধ্যে প্রাপ্ত তথ্য ও সূত্রাদি নিয়ে তদন্ত চলছে।
রুশ সিকিউরিটি ফার্ম ক্যাসপারস্কি’র পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, নীল মেহতার তারিখ ও টাইমজোন নিয়ে করা আবিষ্কারটি এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র।
তবে ওয়ানাক্রাই হামলাটিতে নর্থ কোরিয়া সত্যিই জড়িত আছে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলার জন্য আরও শক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ দরকার।
উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রসঙ্গ টেনে কোম্পানিটি বলেছে, ওই ঘটনায়ও ল্যাজারাস গ্রুপকে নিশ্চিতভাবে জড়িত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না। তাই সময় নিয়ে অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ যোগাড় করতে হবে।