সাভারে যাত্রীবাহী বাস চাপায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসের চালককে গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলো শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর ও শিক্ষক লাঞ্চনার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উপাচার্যের বাসভবনে এক জরুরী সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে এ তাদেরকে পুলিশে সোপর্দসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র- শিক্ষক সর্ম্পক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি শিক্ষক রাজনীতির ধরণ ্ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন শিক্ষক ও লেখক আল রাজী।
ফেসবুকে পোস্টে তিনি লিখেছেন: হায় বিশ্ববিদ্যালয়! বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকবে এ এক সময় চিন্তাও করা যেত না। আমি যখন ছাত্র, তখন একটা খুব উচ্চারিত শ্লোগান ছিল, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ কেন, খুনি এরশাদদ জবাব চাই।” বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনকে আমরা পবিত্র জানতাম। এই জানার পেছনে শক্ত ভিত্তি ছিল। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই ছিলেন এই পবিত্রতার জিম্মাদার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সমস্যা বা গোলোযোগকে নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি-যোগ্যতা-দক্ষতা-গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে মুকাবিলা করা যায় এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাই করা উচিত- এই ছিল শিক্ষকদের অবস্থান। যদি কেউ সে কাজে ব্যর্থ হন তবে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন- এ ছিল খুব সাধারণ চাওয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে চাইতো রাষ্ট্রের ভেতরেই আরেকটি রাষ্ট্র, বলপ্রয়োগ না করে সব কিছু ব্যবস্থিত করার স্পর্ধিত সাধনার মধ্য দিয়ে সে হয়ে উঠতে চাইতো আদর্শ আর অনন্য এক নৈতিক প্রতিষ্ঠান, ন্যায়ের আত্মা।
আর আজ?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা কী ঘটলো? দু ছাত্র মারা গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্ট তো করতে পারলই না, উলটো পুলিশি-হামলা চললো! চল্লিশ জন শিক্ষার্থী হাজতে! হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিতাড়িত!
এ এক অদ্ভুত অমানবিকতার চর্চা। প্রশাসন চাইলেই ঘাড় ধরে বের করে দিতে পারে তার শিক্ষার্থীদের, তাদের নিজেদের আবাস থেকে? শিক্ষার্থীরা যেন কেনা গোলাম! ইচ্ছে হলেই তাদের গলা ধাক্কা দেওয়া যায়! কোনো বাসিন্দাকে তার ঘর থেকে কয়েক ঘণ্টার নোটিশে বের করে রাস্তায় ঠেলে দেওয়া কতোটা পাষণ্ড হলে সম্ভব হয়? কতোটা পাষণ্ড হলে শিক্ষকের সামনেই তরুণের মানসম্মানকে ধূলায় গুড়িয়ে দিয়ে ছেলে-মেয়েদের ওপরে চলতে পারে লাঠিচার্জ?
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ! শিক্ষক সমিতি! নেতা-শিক্ষিক! হায়!
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তিম যাত্রার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আবারও ভরসা করতে ইচ্ছে হয়, সেই শিক্ষার্থীদের ওপরেই; যাদের পূর্বসূরীরা এদেশে বারবার দ্রোহের আগুন জ্বেলে ঘোর অন্ধকারে আগামীর পথ দেখিয়ে গেছে।