এ বছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ৯ লাখ ৬৪ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে বলে আশা জাগানিয়া এক খবর জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বছরের বাকি দিনগুলোতে আরো যেসব কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হবে; তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় এই সংখ্যা বিগত দিনের রেকর্ড ভেঙে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বুধবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, কর্মসংস্থান হওয়া কর্মীদের মধ্যে নারী আছেন ৭১ হাজার ৪৩৩ জন যারা সৌদি আরবে কর্মরত। আমরা গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত, চীন, নেপাল, ফিলিপাইন এবং শ্রীলংকার মতো দেশগুলো। তারা সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে জনশক্তি রপ্তানিখাতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। এর বিপরীতে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার পরও এ বছর এই পরিমাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বড় ভূমিকা পালন করবে। সরকারের পক্ষ থেকেও দাবি করা হচ্ছে, সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমবাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বেশি শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বিদেশে কর্মসংসংস্থান হওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশই হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাকি ৫২ শতাংশ কর্মীর বেশিরভাগের কর্মসংস্থান হয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। এ তুলনায় ইউরোপ বা আমেরিকায় উল্লেখ করার মতো কর্মসংস্থান বাংলাদেশ করতে পারেনি। তার মানে দাঁড়ায় মধ্যপ্রাচ্যেই দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দেশের শ্রমবাজার আটকে আছে। কয়েক বছর ধরে এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলে আসছেন, বিকল্প বাজারের খোঁজ নিতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার শ্রমবাজার ধরতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ও দক্ষ কূটনৈতিক পদক্ষেপ। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ২৬ মিলিয়ন দক্ষ শ্রমশক্তির প্রয়োজন হবে। আর পশ্চিম ইউরোপে দরকার হবে ৪৬ মিলিয়ন। আমরা জানি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স বাড়ানো, পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারের নানা উদ্যোগ আছে। বেশির ক্ষেত্রেই তা মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে, নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে। তবেই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশ, আরো শক্তিশালী হবে অর্থনীতি।