দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিনে প্রতিবারই একটা না একটা অঘটন ঘটে। এসব আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেই। কিন্তু এই ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা এখন ভয়াবহ স্বাধীনতাবিরোধী ঘটনা হিসেবে, রাষ্ট্রবিরোধি ঘটনা হিসেবে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এখন এইসব ঘটনাগুলোকে আমরা বিচ্ছিন্ন বলে গুরুত্বহীন বলতে পারি না। এবার বিজয় দিবসেও যথারীতি এইসব নোংরা ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদদের জন্য মোনাজাতে বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের বেহেশত চেয়ে পরপর দু’বার মোনাজাত পরিচালনা করেছেন এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। ঘটনার পরে উত্তেজনা দেখা দিলে মো. ফায়জুল ইসলাম নামের ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মোনাজাতটি পরিচালনা করেন গোপালপুর দারুল উলুম মাদ্রাসার কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ফায়জুল ইসলাম। মোনাজাত পরিচালনার সময় তিনি পর পর দু’বার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনীদের বেহেশত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভার উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শিশুদের কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বিজয় মঞ্চে বিজয় দিবসের ব্যানার করা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল না। পরে মুক্তাগাছা পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাই বর্তমান মেয়রের কাছে জানতে চান, কেন অনুষ্ঠানের ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করা হয়নি। আবদুল হাই অভিযোগ করেন, ‘ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকার কারণ জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করা হলে জিয়াউর রহমানের ছবিও ব্যবহার করতে হবে। স্বাধীনতাযুদ্ধের তিনি ঘোষক ছিলেন।’ মহান বিজয় দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে এ জাতীয় ঘটনা কিসের ইঙ্গিত দেয়? আমরা কী স্বাধীন বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জন করিনি? তবে কেনো এখনো প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বত্র এইসব স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রকাশ্য দাপট? একজন নির্বাচিত মেয়র, তিনি যে দলেরই হোন না কেনো, তাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ত্ব মেনে চলতে হবে, চলতে হবে সংবিধান মেনে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অস্তিত্বে জড়িয়ে আছেন এক মহান নেতা, যাকে অস্বীকার করলে এই দেশকেই অস্বীকার করতে হয়। নির্বাচিত মেয়র যদি বলেন বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করলে তার দলীয় প্রধানের ছবিও ব্যবহার করতে হবে, তবে কী আমরা বুঝবো না যে, তিনি স্থানীয় সরকারের অধীন একজন মেয়র হয়েও দলীয় অনুগত্যের বাইরে যেতে পারেননি! আবার ময়মনসিংহের আমরা দেখেছি নিজেদের লাল-সবুজে জড়িয়ে ময়মনসিংহ শহরে ‘বিজয় মিছিল’ করেছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসলামী ছাত্রশিবির। এ ঘটনা প্রমাণ করে এরা আবার সংগঠিত হেচ্ছে। আজকের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক এইসব চিহ্নিত শত্রুর বিনাশ।