গত দুই মাস ধরে কথা হচ্ছে ১৭ ডিসেম্বর সাউথ কোরিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিজয় উৎসবে অংশ নেব। ১৩ ডিসেম্বর ভিসা হাতে পাওয়ার পর তা নিশ্চিত হই। ১৬ ডিসেম্বর রাত ২টায় ছিল ফ্লাইট। এদিকে টিএসসির সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে টিএসসিতে ছিল বিজয় উৎসব।
১৫ ডিসেম্বর ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার’ শিরোনামে বিজয় উৎসব উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। সকল সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদক একই সারিতে দাঁড়িয়ে আমরা গেয়েছি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।
সোনার বাংলার প্রতি গভীর মমতা জানিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন শুরু। কিন্তু বিজয়ের উল্লাসে টিএসসিতে যে আতশবাজি হয়েছে তা উপভোগ না করেই রওনা দেই বিমানবন্দরের দিকে।
রাত ২ টার ফ্লাইট ছাড়লো ৩টায়। ঢাকা থেকে ব্যাংকক এবং তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে’তে ট্রানজিট শেষ করে সাউথ কোরিয়ায় পৌঁছি ১৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪ টায়।
ইনচন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাদের সিআপ করেন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার সভাপতি হাবিল উদ্দীন ভাই। তিনি ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয় দিবসে বাংলাদেশিদের মিলন মেলা বসেছিল দূতাবাসে। হল রুমটি বাঙালিয়ানায় ভরে উঠেছিলো।
প্রায় ৬ কোটি মানুষের কোরিয়া যেন একটি বিস্ময়কর রাষ্ট্র। দিনের পর দিন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে পৃথিবীর বুকে নিজেদের নাম তুলে ধরছে তার মূলে রয়েছে শিক্ষায় অবদান, ডেডিকেশন, সময়ের গুরুত্ব, পরিশ্রম, গবেষণা এবং নিজেদের ভাষা সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব। এ দেশটিতে বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার, যার প্রায় ১৪ হাজার শ্রমিক, প্রায় ৯শ শিক্ষার্থী এবং প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী।
বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য প্রবাসীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আসে। মা-বাবার হাত ধরে শিশুরাও এসেছে। কারো মাথায় বিজয় দিবস লেখা ফিতা, কারো হাতে লাল-সবুজ পতাকা। হল রুমের দেয়ালজুড়ে ছিলো ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস লেখা পোস্টার, ছিলো বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা রকম ছবি। সে সব ছবির পাশে লেখা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, যে স্লোগান ছিলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগান। এ স্লোগান সার্বজনীন, এ স্লোগান আবেগের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব জাহিদ হোসেন ভূইঁয়া। উপস্থাপনা করেন দ্বিতীয় সচিব রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কোরিয়া প্রবাসীদের অনেকেই। আলোচনা শেষে শুরু হয় বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আবৃত্তি, সংগীত, বিজয়ের গান দিয়ে ভরে উঠে হল রুম। ডিনার পর্ব দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। এখানে এসে টিএসসিতে ফেলে আসা বিজয়ের উল্লাস পেলাম অনেকটাই।