চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে হতাশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

বাল্যবিবাহ আইন নিয়ে হতাশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। সারা দেশের মানুষের চেষ্টায় বাল্যবিবাহ নিরোধে যেটুকু অগ্রগতি হয়েছিল এই বর্তমান আইনের জন্য সেটা থেমে যাবে। জাতীয় প্রেসক্লাবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিত ২০১৬’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর শিশু সম্পর্কিত সংবাদ নিয়ে বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস করে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। নতুন এই আইন অনুযায়ী মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স হবে যথাক্রমে ১৮ ও ২১ বছর। তবে আইনে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে ও ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়ের বিধান রাখা হয়েছে।

রিয়াজুল হক বলেন, খুব তড়িঘড়ি করে আইনটি পাশ করা হয়েছে। আইনের ব্যাখ্যায় আগে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের কথা বলা থাকলেও নতুন আইনে শুধু অপ্রান্ত বয়স্ক বলা হয়েছে। এর মানে শুধু মেয়ে নয় এখন ছেলেরাও অপ্রান্ত বিয়ে করার আরও সুযোগ পাবে।

তিনি বলেন, অপ্রান্ত বয়স্ক একটা মেয়েকে বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা করা মানে তাকে একটি বড় মানবাধিকার লঙ্ঘণের হাত থেকে বাঁচানো। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির কথা বলে সেটা রাস্তাটা কঠিন হয়ে গেল।

বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, সুযোগসন্ধানীরা এর অপব্যবহার করবে। যেমন ধর্ষকের সাথে বিয়ের ব্যাপারটি। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এখন অনেক সুযোগসন্ধানী ছেলের বাবা তার ছেলেকে বলবে পাশের বাড়ির সুন্দরী ও সম্পদশালী একমাত্র মেয়েটিকে ধর্ষণ কর এরপর তোর সাথে বিয়ে হবে এবং পরে আমরা সব সম্পত্তির মালিক হবে।

নতুন আইনেও আইন ভঙ্গকারীদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু যেখানে আইনের প্রয়োগই নেই এবং শাস্তিও অপ্রতুল।

জিয়াজুল হক বলেন, বাল্যবিবাহের আইনে এক মাস কারাদণ্ড ও ১০০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এটা খুবই অপ্রতুল। একজন রিকশা চালকের পক্ষেও ১০০০ টাকা তেমন কোনো বিষয় না।

শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লা আল মামুন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কমিউনিটি পার্টিসিপেশন এন্ড ডেভলপমেন্টের প্রধান নির্বাহি মোসলেমা বারী। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহীন আনামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর (মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন) শাহানা হুদা রঞ্জনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর শিশু সম্পর্কিত সংবাদ নিয়ে বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে।এই প্রেক্ষপটে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬টি জাতীয় দৈনিক, যথা: প্রথম আলো, যুগান্তর, সমকাল, ইত্তেফাক, দি নিউ এইজ ও দি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত শিশু সম্পর্কিত খবর সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয় যে, আগের দুইবছর ২০১৪ ও ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশু সম্পর্কিত ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’ধরণের সংবাদই কম প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ও ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা কমেছে। বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালে ১১৫০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, ২০১৫ সালে যার সংখ্যা ছিল ১৮৬০জন। ক্ষতিগ্রস্থ শিশুর সংখ্যা ২০১৫ সালে যেখানে ছিল ৯১ হাজার ৮৯২ জন, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে হয়েছে ৬৯ হাজার ৬১৪ জন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লা আল মামুন প্রতিবেদনে বলেন, সার্বিক শিশু পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর, যা শিশুর জন্য ইতিবাচক সেগুলোকে ইতিবাচক সংবাদ এবং নেতিবাচক সংবাদগুলোকে নেতিবাচক সংবাদ হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে শিশু সম্পর্কিত ইতিবাচক ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয় ১১০৩টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ১৬০৪টি। আর নেতবাচক ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৭৬টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ২৮২০টি।

প্রতিবেদনে ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনার সংবাদ, শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, নির্যাতন, অপরাধে জড়িয়ে পড়া, নিখোঁজ, পাচার, শৈত্যপ্রবাহ ও অনিশ্চিত আগামির ঘটনার সংবাদ বেড়েছে।

২০১৬ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ২৮২টি সংবাদে ৩০৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মদ্যে মারা গেছে ২২ জন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ৬৯জন।

প্রবিদনে আরও জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনা, শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা, যৌন নির্যাতন, হত্যা ও হত্যার চেষ্টা, আত্মহত্যা, দায়িত্বে অবহেলা, এসিড নিক্ষেপ ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় শিশুর মৃত্যু হতাহত হওয়ার ঘটনা কমেছে।