শামসুজ্জামান খান
বাংলা সনের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নববর্ষের উৎসব হলো বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। বাঙালি সংস্কৃতির মিলনভূমি। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বাঙালি এ উৎসবে একাকার হয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির গৌরব ঘোষণা করে। আজকে নববর্ষের ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। এটি এখন আর শুধু একটি উৎসব নয়, একটি চেতনা। যে চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে বাঙালি অপসংস্কৃতি ও পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন বাংলা নববর্ষ প্রেরণার উৎস হয়ে ভূমিকা রাখছে। এ দিন বাঙালি নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পায়, নিজেকে নতুন চেতনায় ঋদ্ধ করে। এভাবে বাংলা সন মানে শুধু একটি সংখ্যা ফিরে আসা নয়, একটি চেতনার নবউদ্বোধন।
সন-তারিখের ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি করেছেন এমন একজন ধীমান ব্যক্তি পলাশবরণ পাল বাংলা সনের নানা সমস্যা নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে বলেছেন, কুড়ি-পঁচিশ বছর আগে ‘বঙ্গাব্দ’ শব্দটার চল ছিল না, তখন বলা হতো ‘সাল’ বা ‘সন’। পশ্চিম ভারতে কেউ বিক্রম সংবৎকে বিক্রম সাল বা বিক্রম সন বলে না। নেপালে বুদ্ধ সংবৎকে কেউ বুদ্ধ সাল বলে না। বাংলায় তাহলে ‘সাল’ বা ‘সন’ বলা হয় কেন? এখানে মনে রাখতে হবে, সাল কথাটা ফারসি, সন কথাটা আরবি। এ থেকে মনে হয়, হিজরি ক্যালেন্ডার থেকেই কোনোভাবে উদ্ভূত আমাদের ‘বাংলা অব্দ’ বা ‘বাংলা সাল’। তাই যদি হয়, তাহলে আকবর থিউরির চেয়ে বিশ্বাস্য অন্য কোনো থিউরির সন্ধান পাওয়া মুশকিল (সাল-তারিখের ইতিহাস —পলাশবরণ পাল, পৃ. ৯৫, সম্রাট প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৯৪)।
কোনো কোনো গবেষক সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্ককে ‘বঙ্গাব্দের’ প্রবর্তক বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ বাংলার সুলতানি আমলের বিখ্যাত সুলতান হোসেন শাহকে বাংলা সনের প্রবর্তক বলে মনে করেন। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ভূতপূর্ব কারমাইকেল অধ্যাপক ও মধ্য এশিয়ার ইতিহাস-বিশেষজ্ঞ ব্রতীন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘…এটা পরিষ্কার যে, আকবরের রাজত্বের আগে বাংলা সন ব্যবহারের কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও আলোচিত তথ্যাদি আকবরের আমলে চান্দ্র-হিজরি অব্দের সংস্কারের মধ্যেই বঙ্গাব্দের সূচনার ইঙ্গিত করে। এর বিপরীত কোনো ঘটনা নির্দেশক বিশ্বাসযোগ্য তথ্যসূত্র আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত এ মতই গ্রহণযোগ্য (বাঙ্গালা সন: বঙ্গ, বাঙ্গালা ও ভারত_ব্রতীন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, পৃ. ৮৭, কলকাতা, প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, ২০০০)। আমি বাংলা সন নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলে মনে করি, বাংলা সন চালু করেন মুর্শিদাবাদের নবাবেরা; হয়তো মুর্শিদকুলি খাঁ (মৃত্যু ১৭২৭)।
বাংলা সনের ইতিহাস ও এর উদ্ভব বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও বাঙালির ইতিহাস ও তাদের জীবনযাত্রায় এ সনের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও গভীর। গ্রামীণ বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী ব্যবসায়িক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সব কর্মকান্ডে বাংলা সনের ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। ফসল বোনা, ফসলের সময়ভিত্তিক যত্ন বা পরিচর্যাসহ যাবতীয় কৃষি কাজ বাংলা সন-তারিখ অনুযায়ী নিষ্পন্ন করা হতো। সেই সঙ্গে ভালো ফসল ঘরে উঠলে বাঙালির ১২ মাসের ১৩ পার্বণও উদযাপন করা হতো বাংলা পঞ্জিকার দিন-ক্ষণ হিসাব করে। বাংলায় হরেক রকম মেলার দিন-তারিখও নির্ধারিত ছিল বাংলা সনের সঙ্গে। শুধু ফসল আর উৎসব নয়, বাঙালি কৃষকের পারিবারিক এবং সামাজিক কাজকর্ম, শুভদিন, বিবাহ, জন্ম-মৃত্যুসহ জীবনের সব বিষয়েই বাংলা সন ছিল একক ও অনন্য। বাংলা সন-তারিখের যেমন হিসাব কষে জীবনযাত্রা নির্বাহ করত, তার সঙ্গে চাঁদের হিসাবটাও ছিল মুখ্য। অমাবস্যা, পূর্ণিমা, সংক্রান্তি এবং তিথি-নক্ষত্রের ব্যাপারও আধুনিক দৃষ্টিতে নিরক্ষর; কিন্তু জীবনের পাঠশালায় কঠোর প্রশিক্ষণে ঝুনো হয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য ছিল দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য। বাঙালির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনকেই শুধু বাংলা সন সবল ও সক্রিয় করেনি; তার নিজস্ব ঘরোয়া ও সামাজিক জীবনবৃত্তে এবং তার বিশ্বদৃষ্টি গঠনেও বাংলা সননির্ভর সাংস্কৃতিক, দার্শনিক ও মনস্তাত্তি্বক উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাছাড়া সমাজ, স্থানীয় সরকার, জমিদার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেও সহায়ক হয়েছে বাংলা সন। ইংরেজ আমল থেকে এ কাল পর্যন্ত জমিজমার দলিলপত্র ও খাজনা দেয়ার ব্যাপারে বাংলা সনই ছিল হিসাব-কিতাবের মাধ্যম।
গ্রামবাংলার মৌলিক অর্থকরী, উৎপাদনমূলক এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনাগত কাজ ও জমিদার-সরকারের মধ্যে পত্তনি, বন্দোবস্ত, ইজারা, নিলাম, জমি কেনাবেচাসহ সব কাজ অর্থাৎ প্রজাসাধারণ ও জমিদার বা সরকারের মধ্যে আর্থিক, আইনগত কাজগুলো বাংলা ভাষা ও বাংলা দিন-তারিখকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পন্ন করাই ছিল প্রথাসিদ্ধ নিয়ম।
বাঙালির কৃষিনির্ভর ওই জীবনে গ্রামীণ বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তনের ধারা ছিল খুবই শ্লথ। নদী-নালা, খাল-বিলের বিপুল বিস্তার, যাতায়াতের দুর্গতি এবং নগদ পয়সার অভাবে জনজীবন ছিল স্তিমিত। মানুষের মধ্যে এক ধরনের জাড্য বিরাজ করছিল। বাঙালির বাংলা সন যেমন ফসল উৎপাদনের নানা পর্যায়ে, তেমনি তাদের জীবনেও আনতো ফসলের মৌসুমের উষ্ণতা, উচ্ছলতা। বর্ষাকালে ধান-পাট কাটা হলে তা বিক্রি করে যে নগদ পয়সা হাতে আসত তা দিয়েই বাড়ির লোকজনের কাপড়চোপড় কেনা, খাজনার পাট চুকানোর পর কয়টা মাস অলস সময় কাটানো। শীতকালের আমন ধান ঘরে উঠলে আবার পিঠা-পুলি খাওয়া, নবান্ন উৎসব, নানা রকম মেলার আয়োজন, যাত্রা, জারি-সারি, রামায়ণ পাঠ, গম্ভীরা, কীর্তন, পালার আসর, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠিখেলা, মেয়েদের গার্সি সহেলা উৎসব, ছেলেদের দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বাণখেলা, হা-ডু-ডু খেলার জমজমাট আনন্দ-ফুর্তি। এর পর বড় আকারের চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, বাণফোঁড়ার কৃত্য, বৈশাখের ভোরে কৃষক পরিবারের পারিবারিক ‘আমানি’ উৎসব, যার লক্ষ্য সারা বছরের শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি এবং উৎকৃষ্ট ফলনের আকাঙ্ক্ষা। পরে হালখাতা উৎসব, নানা জায়গায় বড় ধরনের মেলা, তাতে গ্রামীণ মৃৎশিল্প ও কারুপণ্যের বিকিকিনি। বিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, সার্কাস নিয়েই গ্রামীণ মানুষের সে কী আনন্দ! পুঁতির মালা, বাঁশি, কাঠ ও বাঁশের খেলনা, কদমা, বিন্নি হাওয়ার মিঠাই দিয়েই হাসি ও সুখের আভা ফোটা তুষ্ট গ্রামীণ নারী ও শিশুর মুখ।
পাকিস্তান আমলে বাঙালি কৃষক জীবনের এ মৌলিক উৎসব-পার্বণের বিষয়টিকে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ গ্রামবাংলার এ শঙ্কর বা মিশ্র সংস্কৃতিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসী এবং মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছিল। এ সমন্বিত সংস্কৃতিকে পাকিস্তানি এবং তাদের এ দেশীয় ধ্বজাধারী এবং নবউত্থিত মুসলিম বাঙালি মধ্যবিত্তের একটা অংশ সরকারি পর্যায়ে এবং সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য তথা মুসলিম আদর্শের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রচার চালাতে থাকে। এ প্রচার যে বিফলে গেছে, তা বলা যায় না। তৃণমূল পর্যায়ের অনেক লোকউৎসব ও করণক্রিয়ার উপযোগী সামাজিক পটভূমি ও ফাংশন না থাকার জন্য বিলুপ্ত হয়েছে বা বিলুপ্তির পথে রয়েছে। তেমনি এ ধরনের বিরোধী প্রচারেও ধীরে ধীরে ময়মনসিংহের হাওর অঞ্চলের বিখ্যাত ষাঁড়ের লড়াই, মুন্সীগঞ্জ-মানিকগঞ্জের গরুর দৌড়, কীর্তন-রামলীলা-কৃষ্ণলীলা, দিনাজপুরের নেকমর্দের মেলা, কোনো কোনো অঞ্চলের চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও চড়ক উৎসব, হালখাতার সেই ধর্মীয় আবহ, নিষ্ঠা, ধূপ-ধুনোময় পরিবেশ এখন খুব একটা দেখা যায় না। এছাড়া লক্ষ্মীদাতা গণেশের মূর্তিতে সিঁদুর, তুলসীপাতা হিন্দু দোকানেও এখন সব সময় দেখা যায় না। আগে মুসলমান দোকানের হালখাতায় সমন্বিত ঐতিহ্যের যে ছাপ পড়ত বাংলাদেশের সামাজিক জীবনে, ইসলামাইজেশনের এ যুগে তা আর দেখা যায় না। তবে নান্দনিকতার জন্য আল্পনা ও মৃৎপাত্র, সরা, হাঁড়ি মুসলিম গৃহসজ্জা ও বিয়েবাড়িতে নব তাৎপর্যে ঢুকে পড়েছে।
বাংলা সন ও বাঙালির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির অবস্থান বর্তমান বাংলাদেশে আর আগের মতো নেই। এখন কৃষক পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া শিখেছে। অর্থনীতির মধ্যে নানা উপাদান যুক্ত হয়ে অনেকটা প্রাণসঞ্চার হয়েছে এবং এতে অনেকের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। হাতে নগদ পয়সা আসা শুরু হয়েছে। ফলে জীবনধারার পরিবর্তন ঘটেছে। বদলেছে ঘরবাড়ির ধরন, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র এবং সামাজিক রীতি-নীতি ও অভ্যাসের। এর ফলেই বাঙালির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির উপাদান এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাব সম্পর্কিত বাংলা সনও আর এখন একাধিপত্য করতে পারছে না। গ্রামীণ মানুষের সন্তানাদি এখন গ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য যে কাজই করুক না কেন, তার সঙ্গে বাংলা সনের সম্পর্ক আগের মতো ওতপ্রোত নয়। বরং গ্রামবাংলায় এখন যে পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে, তাতে বাংলা সনের ব্যবহারগত পরিসর সঙ্কুচিত হচ্ছে। অন্যদিকে যারা শহরে বাস করে তারা আন্তর্জাতিক রোমান ক্যালেন্ডারকেই ব্যবহার করছে। বাংলা সন এখনও স্থান পাচ্ছে প্রধানত সাবেক কালের জীবনধারায় অভ্যস্ত গ্রামীণ গৃহকর্ত্রীর কাছে। গ্রামবাংলায় ব্যাপক সংখ্যক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা চালু হওয়ায় জীবনধারায় নানা পরিবর্তন এসেছে। বিদেশি শব্দ, পাশ্চাত্য জীবনধারার নানা উপকরণ, জিন্সের প্যান্ট এবং কোকাকোলা ঢুকে গেছে গ্রামে।
বাংলা সন ও বাংলা নববর্ষের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি কীভাবে ঘটেছে, আমরা সেদিকে নজর দিতে পারি। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। মোগল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তক, এ কথা বলেও পাকি-শাসকচক্রের মন ভোলানো যায়নি (পাকিস্তান আমলে নির্মিত ঢাকার মোহাম্মদপুরের নানা রাস্তার নাম প্রধানত মোগল সম্রাটদের নামে করা হলেও আকবরের নামে কোনো রাস্তার নাম নেই। কারণ তিনি পাকিস্তান সরকারের না-পছন্দ মিলিত সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।) তবে তখন বাংলা সন ও নববর্ষের উৎসব বাঙালিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক নতুন জাতীয় রূপ ও তাৎপর্য লাভ করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালির যে নতুন ধর্মীয় নিরপেক্ষ ও নৃতাত্তি্বক জাতীয় বোধ জাগ্রত হয়ে ওঠে, তাতে বাংলা সন ও বাংলা নববর্ষ উৎসব, তার আনুষঙ্গিক ও উপাদানগুলো তাতে নতুন গতিবেগ সৃষ্টি করে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিশাল বিজয় এ নতুন বাঙালি জাতীয়তাবাদ জনগণের নির্বাচনী ম্যান্ডেটে জনসমর্থন ও রাজনৈতিক বৈধতা লাভ করে। পূর্ব বাংলার নগরবাসী বাঙালি মুসলমান সমাজ নিজস্ব স্বাদেশিক ঐতিহ্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে এবং বাঙালি জাতি গঠন এবং জাতীয়তাবাদের বিকাশে বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখকে সামনে আনে। ফলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ হয়ে ওঠে এক মহান জাতীয় উৎসবের দিন।
নতুন আঙ্গিকে বাঙালির এই মহান জাতীয় উৎসব এখন শুধু ঢাকা শহরেই নয়, গোটা বাংলাদেশে শহর-বন্দর-গ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এক সময় যা ছিল গ্রামীণ বাংলাদেশের কৃষকের ক্ষুদ্র এবং সীমিত অনুষ্ঠান, তা এখন বাঙালির সংস্কৃতি ও জীবন দর্শনের বাঙ্ময় প্রকাশের এক অনন্য রূপ যেমন লাভ করেছে; তেমনি তা নানা সামাজিক, অনাসৃষ্টি, ধর্মান্ধতা, স্বৈরশাসন প্রভৃতির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত মুখোশ, প্রতীক, কার্টুন ও আবহমান বাংলার নানা ভাবব্যঞ্জনা চিত্রনের মাধ্যম বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ বাঙালি সৌন্দর্য চেতনা, মানবিক বোধ এবং শ্রেয়চেতনার এক অনুপম উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
লেখক, লোক গবেষক ও মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি।