উর্দু ছবির দাপটে যখন বাংলা সিনেমার অবস্থা করুণ তখন ১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ নির্মাণ করেন সুভাষ দত্ত। সেই সময়ের সুপারহিট ছিলো সিনেমাটি। বাংলা চলচ্চিত্র সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল ধ্বংসের হাত থেকে।
মঙ্গলবার এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে ‘সুতরাং’ ছবির স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা সুভাষ দত্তের ছোট বোন অধ্যাপক ঝণা রানী দত্ত।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি সুভাষ দত্তের সাদাকালো এ ছবিটিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে রঙিন করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে খ্যাত সারাহ বেগম কবরী, বিএফডিসির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক শচীন্দ্রনাথ হালদার, ফিল্ম আর্কাইভের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ওমর সানি, চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, মুভি মোঘল খ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক জাহাঙ্গীর খান, ‘সুতরাং’ ছবির সংগ্রাহক ফখরুল আলম ও চিত্রনায়ক সায়মন।
অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন গবেষক ও শিক্ষক অনুপম হায়াৎ। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।
ঐশীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদেরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সভাপতি। এরপর স্বারকগ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করেন অতিথিরা।
বক্তব্য দিতে গিয়ে স্মৃতিকাতর কবরী বলেন, ‘আমি তখন তের কি চৌদ্দ বছরের কিশোরী। আমাকে একপ্রকার জোর করে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসলেন সুভাষদা। আমার প্রথম ছবি এটি। এটি সুভাষদারও প্রথম। দুজনই সুপারহিট হলাম। চলচ্চিত্রে আমার সফল যাত্রা শুরু হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুভাষদা তুমি আজ নেই কিন্তু তোমার হাতে গড়া কবরী এখনো আছে। তুমি অনেক তারকাকে আমার মতই তৈরি করেছ কিন্তু নিজে রয়ে গেছো নিভৃতে।’
অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘যে সময়টায় উর্দু ছবির জয়জয়কার সেসময়টায় তিনি বাংলা ছবি নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন। তিনি যেমন সফল অভিনেতা তেমিন নির্মাতাও।’
তপন কুমার ঘোষ, ‘তার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি কিংবা জেনেছি। যা বুঝেছি, তার মত বিনয়ী নির্মাতা খুব কমই ছিলেন। অভিনেতা হিসেবে তিনি যেমন ছিলেন সেরা তেমনি নির্মাণেও ছিলেন নিপুণ।’
শচীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘সুভাষ দত্তের অনেকগুলো ছবি আমাদের ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষণ করা আছে। আমাদের আর্কাইভ বিশ্বের সমৃদ্ধশালী আর্কাইভগুলোর একটি। এখানে ৪ হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি ছবি সংরক্ষণ করা আছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ড, আবদুল সজিদ বলেন, ‘স্বারকগ্রন্থটির মধ্যে আমরা নানাভাবে সুভাষ দত্তকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তার নির্মিত ‘সুতরাং’ ছবিটি এখনও যেন নতুন। এই গল্প সবসময়ের জন্যই। ’
আলোচনা পর্ব শেষে মিলনায়তনে ‘সুতরাং’ ছবিটি প্রদর্শন করা হয়।
স্বারকগ্রন্থটি প্রকাশ করেন সুভাষ দত্তের ছোট বোন অধ্যাপক ঝর্ণা রানী দত্ত। সম্পাদনা পরিষদে তিনি নিজে ছাড়াও আরও আছেন ‘ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, অনুপম হায়াৎড. মাসুম রেজা, আহমাদ-এ নবীন।
চলচ্চিত্রের পোস্টার ডিজাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এহতেশাম তাকে প্রথম নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটান। তার ছবি ‘এদেশ তোমার আমার’ এ তিনি প্রধান নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল। এরপর একে একে তিনি ২৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। তার পরিচালিত ছবির সংখ্যাও ২৪। পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সুতরাং’। প্রথম ছবিই সেসময়ে আট লাখ টাকা ব্যবসায় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ছবিটি ফ্রাঙ্কফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার জিতেছিল। এছাড়া তার পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ ছবির জন্য চলচ্চিত্র পচিালক ক্যাটাগরি ছাড়াও ৪টিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিল।