সরকারের সমালোচনা করা স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো এখন মারাত্মক চাপে রয়েছে বলে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ এবং ‘জঙ্গি দমন অভিযান’ সহ সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপের সমালোচনা করেও অতীতে আলোচনায় ছিলো লন্ডন ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সংগঠনটির বার্ষিক প্রতিবেদনের একদিকে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ধর্মীয় নিরপেক্ষ শক্তিকে নিশ্চুপ করে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ওই একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার ভিন্নমতালম্বীদের হুমকিদাতা অস্ত্রধারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অ্যামনেস্টির বক্তব্য দুটি পরষ্পরবিরোধী বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিবেদন দিয়ে অ্যামনেস্টির এমন দ্বৈত অবস্থান কেন?
এমন প্রশ্ন আর সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে এরা শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করে। কোন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এরা করে না। শুধু অভিযোগ থেকে, অভিযোগের তথ্য ভেরিফাই না করে, যাচাই, পুনঃ যাচাই না করেই উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সেটি তারা করছে না। তাই এ ধরনের রিপোর্ট ‘অসৎ’ এবং ‘অনৈতিক’।
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমন এখন গ্লোবাল ইস্যু। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে কোন ধরনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান সারা বিশ্বেই হচ্ছে। সেখানে একটি মানবাধিকার সংগঠনের এমন হস্তক্ষেপ কোনভাবেই কাম্য নয়। কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে তারা সেটি তদন্ত করতে পারে। কিন্তু এমন ঢালাওভাবে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রকাশ অনুচিত। অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে জঙ্গিবাদের মদদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তাদের মানবাধিকার ইস্যুতে পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
দেশের ভিন্নমতালম্বীদের দমন করা হচ্ছে অ্যামনেস্টির এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দি ডেইলি সানের সম্পাদক আরও বলেন: একজন সাংবাদিক হিসেবে এবং পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বলছি, দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্য। আমরা এখানে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতার চর্চা করছি। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কোন চাপ নেই। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আমরা তার বস্তুনিষ্ঠতা এবং পুনঃযাচাই করে সত্যাতা নির্ধারণ করে সংবাদ প্রকাশ করি। কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কোন অভিযোগেরই সুষ্ঠু তদন্ত করে না। এর ভিত্তিতে যেকোন রিপোর্ট তৈরি করা অনৈতিক।
দমনমূলক কার্যপদ্ধতি ও নতুন আইনের দ্বারা বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে ও ভিন্নমত পোষণকারীদের হুমকি দিচ্ছে সরকার সেসব অস্ত্রধারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’কে সামনে রেখে ‘ভয় ও দমনের মাঝখানে: বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত’ শীর্ষকপ্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করা হয়।