ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান দেয়া আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজটি ভেরিফাইড (যাচাইকৃত) হলেও রাজনৈতিক দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ফেসবুকে খুঁজতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ফেসবুকের সার্চ অপশনে গিয়ে বাংলায় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ লিখলে হরেক রকম পেজ পাওয়া যায়। তবে এগুলোর কোনোটিই অফিসিয়াল এবং ভেরিফাইড পেজ নয়। ছাত্রলীগের একটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থাকলেও এখনো তা ভেরিফাইড করা হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুকে ছাত্রলীগের আসল ফেসবুক পেজ নিয়ে রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।
ক্ষমতাসীন দলের চেয়েও বয়সে প্রবীণ এই ছাত্রসংগঠনের ফেসবুকে আনুষ্ঠানিক পরিচিতি অনিশ্চিত হলেও সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস.এম জাকির হোসেনের নামে খোলা পেজটি ভেরিফাইড। সংগঠনের অফিশিয়াল পেজে লাইকের সংখ্যা যেখানে মাত্র ১ লাখ ২ হাজার ২’শ ৫৯ সেখানে জাকিরের পেজে লাইকের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
সামাজিক মাধ্যমে সংগঠনের পরিচয় সংকট অথচ নিজের পেজটি কিভাবে ভেরিয়ফাইড এবং এতো লাইক পেলো এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে চ্যানেল আই অনলাইনের পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পর একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জাকিরের জবাব না পেয়ে কথা হয় ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইসফাক আবিরের সঙ্গে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘অবশ্যই ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনের ফেসবুক পেজ ভেরিফাইড হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সভাপতির পেজটি কিন্তু এখনো ভেরিফাইড হয়নি। সাধারণ সম্পাদকের পেজটি ভেরিফাইড হওয়ার ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।https://www.facebook.com/bslcentral/এটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ। সংগঠনের http://bsl.org.bd/ওয়েবসাইটের একেবারে নিচে এই পেজের লিংক দেয়া আছে। পেজটি আমরা ভেরিফাইড করার চেষ্টা করছি। সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কাছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি তুলে ধরেছেন।’
ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের নাম ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস লিগ’ ইংরেজিতে (Bangladesh Students’ League) লিখে ফেসবুকে সার্চ দিলে সামনে আসা ফলাফলে মূল পেজের নিচে একই নামের অন্তত ২৭ টি পেজ পাওয়া যায়।
এসব পেজের সংগঠন পরিচিতির জায়গায় লেখা হয়েছে রাজনৈতিক দল, বিজনেস সেন্টার, রাজনৈতিক সংগঠন আবার কোনোটির পরিচয় কর্মাশিয়াল ইকুইপমেন্ট,প্রফেশনাল সার্ভিস! কোনোটিতে আবার ছাত্রলীগের প্রতীকের পাশেই ফটোশপে ‘ফেসবুকের ভেরিফাইড’ চিহ্ন বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
শুধু পেজ নয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিও রয়েছে। এসব আইডিতে স্থানীয় নেতার প্রচারণার পাশাপাশি বিয়ের ছবিও পোস্ট করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের নামে খোলা এসব পেজের কোনো কোনোটিতে লাইকের সংখ্যা সর্বনিম্ন ৫৯ থেকে শুরু করে ১১-১২ হাজার। ‘ছাত্রলীগের সর্ববৃহৎ ফ্যানপেজ’ দাবি করা ফেসবুক পেজে লাইকের সংখ্যা অফিসিয়াল পেজের চেয়েও ২০ হাজার বেশি। এসব অসমর্থিত পেজ থেকে কেউ বা কোনো মহল চাইলে অপপ্রচার-গুজব ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই যায়। এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত সংগঠনের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক।
তিনি বলেন,‘দেশে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে স্মার্টফোন। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও অনেক। এমন অবস্থায় এসব পেজের কোনটি থেকে ভুয়া খবর, তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি,গুজব ছড়ানো হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই আমরা অফিসিয়াল ফেজবুক পেজটি ভেরিফাইড করাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি এই কমিটির মেয়াদকালেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেজবুক পেজ ভেরিফাইড করে যেতে পারবো।’
অফিসিয়াল পেজ বাদে একই নামে খোলা ইংরেজি-বাংলায় লেখা পেজগুলো বন্ধে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘শুনেছি এসব পেজ রিপোর্ট করার মাধ্যমে বন্ধ করা যায়। আমরা এজন্য কয়েকবার রিপোর্ট করেছি। তবুও এখনো যেসব পেজ আছে সেগুলো বন্ধ করতে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের কোনো অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ নেই।
আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘এ রকম পেজগুলোর অ্যাডমিনদের আমরা অনুরোধ করব, পেজগুলোকে “আনঅফিশিয়াল” হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন। অন্যথায় আমরা অতিসত্বর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’
এতে বলা হয়, ‘গত কিছুদিন ধরেই আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের নামে কিছু “ভুয়া ফেসবুক পেজ” বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই পেজগুলো থেকে নানা রকম মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও শেখ রেহানার পুত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের একটি ফেসবুক আইডি অফিশিয়ালি চালু আছে; যা তারা নিজেরই তত্ত্বাবধান করে থাকেন।’