চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশ কি আসলেই বৈষম্যের দেশে পরিণত হচ্ছে?

বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপনের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য দূর হচ্ছে না। বরং সেটা প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মনওয়ার উদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এতে করে সবার অবস্থানই বদলে যাচ্ছে। দারিদ্রের হারও কমছে, কিন্তু এরপরও ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য আরো বাড়ছে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে এটা হচ্ছে। যারা দিচ্ছে তারা এবং যারা নিচ্ছে তাদের মধ্যে পার্থক্যটা প্রবল হচ্ছে। মার্জিনাল সুযোগ সুবিধাগুলো এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। যেমন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাশালী কিছু মানুষের পরিচিত জনেরাই বেশি বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে আর অন্যরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছে। সেসব কারণেও দেখা সবার মধ্যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বেশি বেশি।

একই কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, সাধারণত দেখা যায় যেখানে ইনকাম বেড়ে যায় সেখানে বৈষম্য বেড়ে যায়। বাংলাদেশেও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এসবের কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, নিয়ম নীতির বাস্তবায়নের অভাব এবং বিতরণ পদ্ধতিতে ত্রুটির কারণে এটা হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় যার যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তিনি সেটা পান না।

মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্ররা দরিদ্র হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ ধনীদের হাতে। দেশের ১০ শতাংশ ধনীর হাতেই রয়েছে ৩৮ শতাংশ সম্পদ।

অতনু রব্বানী

আর মোট আয়ের মাত্র ১ শতাংশ ভোগ করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ।  তবে গত ছয় বছরে সার্বিক দারিদ্র্যের হার সাড়ে ৩১ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী এখন চরম দরিদ্র মানুষের হার ১৩ দশমিক ৮। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে এই হার ১৬ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯। অর্থাৎ বাংলাদেশের চরম দারিদ্রের হার ক্যালিফোর্নিয়ার চেয়ে কম।

তবে সমস্যা সমাধানে এ কে এম মনওয়ার উদ্দীন আহমদ গুরুত্ব দেন বেশ কিছু বিষয়ের উপর। তিনি বলেন, দেশের ভেতরে পুঁজিবাদের যে প্রভাব সেটা এসব সমস্যাগুলোকে আরো বাড়াচ্ছে। এখানে সমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ অনেক বেশি সম্পদ ভোগ করছে, আর একটি বড় অংশ তাদের প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সমস্যা সমাধানে তিনি বাজার বিশ্লেষণের উপর জোর দেন। দেশের বাজারগুলো ‘রুল ও রেগুলেট’ করার ধরনের মধ্যে দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

‘যারা পিছিয়ে পড়েছে তারা যেন সঠিকভাবে রাষ্ট্রের দেওয়া সুযোগ সুবিধাগুলো পায় সেদিকে নজর দিতে হবে।’

আর অতনু রব্বানীর মতে, পাশ্চাত্য অনেক দেশে আয়ের বৈষম্য কমানোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কম আয় করা মানুষগুলোকে বেশে বেশি সহায়তা প্রদান করা হয়। ধনীদের ইনকাম ট্যাক্স দরিদ্রদের মাঝে বিভাজন করা হয়। সেটা বাংলাদেশেও করা গেলে এই বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্টে বলা হয়,  এই মুহূর্তে দেশে প্রতি ১’শ জন মানুষের মধ্যে ২৪ জন গরীব, আর হতদরিদ্র প্রায় ১৩ জন। অবশ্য চরম দারিদ্র্যের আন্তর্জাতিক হারের চেয়ে বাংলাদেশের হার কম।

এর আগে খানার আয়-ব্যয় জরিপ হয়েছিলো ২০১০ সালে। ওই রিপোর্টের তথ্যমতে বাংলাদেশে গরীব মানুষের হার ছিলো সাড়ে ৩১ শতাংশ, এখন তা ২৪ দশমিক ৩। সর্বশেষ অর্থাৎ ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী একটি বাড়ির মাসিক গড় আয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা।

বিবিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২০ লাখ। সেই হিসাবে, দেশে ৩ কোটি ৯৩ লাখ দরিদ্র মানুষ আছে। হতদরিদ্রের সংখ্যা ২ কোটি ৮ লাখ।