চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে কানাডায় যা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের উপর হামলার চেষ্টা এবং আত্মঘাতি হামলার চেষ্টা বিষয়ে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোনো শক্ত  ‘বেইস’ নাই। তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। আতংকিত বোধ করার কোনো কারণ নাই।

কানাডার অটোয়ায় সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফেরার পথে গত বৃহস্পতিবার এয়ারপোর্ট সংলগ্ন হোটেল র‌্যাডিসনে কানাডার অন্টারিও ভিত্তিক নতুনদেশ ডটকম নামক বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ এর মুখোমুখি হয়ে এসব বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

গত ১৮ মার্চ শনিবার কানাডায় এক ব্যাক্তিগত সফরে এসেছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার নানা ঘটনা নিয়ে প্রবাসীদের উদ্বিগ্নের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি সমস্যাটা বাংলাদেশের একক কোনো সমস্যা নয়। সারা  পৃথিবীতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে  আমরা জঙ্গিদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণের  মধ্যেই আছে। তবে জঙ্গিদের আমরা ইলিমিনেট করতে পারি নাই। কিন্ত তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আছে। আবারো বলি, জঙ্গিদের আমরা ইলিমিনেট করতে পারি নাই, কিন্তু তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আছে।

নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও  সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের উপর হামলার চেষ্টা হয়েছে, এবং আত্মঘাতি হামলার চেষ্টাও হয়েছে। এ বিষয় গুলো নিয়ে জনগণ আতংকিত বোধ করছে। এবিষয় নিয়ে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: আতংকিত বোধ করার কোনো কারণ নাই।বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোনো শক্ত  ‘বেইস’ নাই।  দীর্ঘদিন ধরেই নানা দেশে নানা নামে জঙ্গি কর্মকান্ড হচ্ছে। কোথাও আইএস, কোথাও আলকায়েদার নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সাম্প্রতিক সময়ে  যে কটি ‘আত্মঘাতি’ হামলার ঘটনা ঘটেছে- তার টার্গেট আমাদের এলিট ফোর্স- র‌্যাব।এ বিষয়ে তিনি বলেন, র‌্যাব কিন্তু হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা হামলার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু করতে পারেনি। দেওয়াল টপকে দুই জন র‌্যাবের সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো। র‌্যাব সদস্যরা তাদের ঝাপটে ধরে ফেলেছে। সেই সময় বোমা  বিষ্ফোরন ঘটে র‌্যাব সদস্যও আহত হয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, রক্তপাতের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটা এমন একটি দেশ, যেখানে মানুষ দেশের জন্য জীবন দেয়, প্রতিবেশির জন্য জীবন দেয়। ভ্রাতৃত্ববোধের এমন নজির খুব কম দেশেই পাওয়া যায়। ভাতৃপ্রতিম এমন একটি দেশে জঙ্গিবাদ শক্ত খুটির উপর দাড়াতে পারে না, পারবে না। আমি বলবো- আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নাই। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র কিন্তু আছে, দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীবলেন, জঙ্গিদের সক্ষমতার সঙ্গেই আমরা র‌্যাব, পুলিশ বাহিনীকে আরো দক্ষ করেছি, গোয়েন্দা সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়েছি। লোকবলও বাড়িয়েছি। গোয়েন্দারা নজরদারি করতে পারছে, তাদের নেটওয়ার্ক, তৎপরতা জেনে যাচ্ছে এবং হামলার প্রস্তুতি নস্যাৎ করে দিতে পারছে। এগুলো কিন্তু আমাদের র‌্যাব, পুলিশ বাহিনীর সাফল্য। দেখুন, যেখানেই তারা আস্তানা গাড়ছে, আমাদের নজরে চলে আসছে সেগুলো। আমরা অভিযান চালিয়ে সেগুলো দমন করে ফেলছি।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে জঙ্গি তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে। কখনো হুজি, জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, আনসারারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি নানা নামে এরা কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। নানা নামে আবির্ভূত হলেও এরা কিন্তু আসলে একই গোষ্ঠী। প্রথম জীবনে এদের সবাই ছাত্র শিবির করতো।

র‌্যাবের সদর দপ্তরে আত্মঘাতি হামলার চেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনার পর ‘আইএস’  দায় স্বীকার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন : আর কয়েক দিন পর সড়ক দুর্ঘটনা হলেও আইএস তার দায় স্বীকার করবে। ‘আই এস ‘এর দায় স্বীকার বা তাদের নামে প্রচারনা চালানোর একটা প্রবণতা বাংলাদেশে আছে। কোনো ঘটনা ঘটলেই আমেরিকার কি যেনো একটা সাইট খবর দেয়- আইএস দায় স্বীকার করেছে। আমাদের কাছে এইসব দাবির কোনো ভিত্তি নাই।

যে  দেশে তো ৯৯ শতাংশ লোকই মুসলমান, তা হলে কাদের বিরুদ্ধে, কি কারনে লোক জঙ্গি হবে। যে সব দেশে আইএস বা আলকায়েদার কর্মকাণ্ড বিস্তৃত, তাদের সীমান্ত সংলগ্নদেশগুলো থেকে এই চরমপন্থীরা সেইসব দেশে যায়। বাংলাদেশে এমন কোনো দেশের সাথে সীমান্ত দ্বারা সর্ম্পযুক্ত নয় বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

অবাধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রুদ্ধ হয়ে চরমপন্থার জন্ম নিয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এটি একটি হাস্যকর বক্তব্য। প্রতি পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশে  ইলেকশন হচ্ছে। আগামী নির্বাচনও সময় মতো হবে। কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেটা তাদের ব্যাপার। সে জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রুদ্ধ হয়ে গেছে বলা যাবে না।

গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, সেটি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। তারা এখন ভুল বুঝতে পেরেছে। আগামী নির্বাচন সময় মতো হবে এবং নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বিএনপিও সেই নির্বাচনে অংশ নেবে।