মেডিকেল পড়ুয়া না হলেও ইংরেজিতে দক্ষ বাংলাদেশী তরুণদেরকে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রোজগারের সুযোগ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গুগলগ্লাস নির্ভর স্টার্টআপ ‘অগমেডিক্স’। আগামী ৫ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বের নামকরা এই স্টার্টআপে কাজ করার সুযোগ পাবে বাংলাদেশের ৭ হাজারেরও বেশি তরুণ।
এই সুযোগের মাধ্যমে দেশের মেডিকেল বিষয়ে আগ্রহীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজ, আধুনিক চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে পারবে। গুগলের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তারা আমেরিকার ডাক্তারদের ‘দূর লেখক’ বা রিমোট স্ক্রাইবার হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন তরুণ ইয়ান শাকিলের প্রতিষ্ঠান ‘অগমেডিক্স’ বাংলাদেশের তরুণদের মেডিকেল আউটসোর্সিংয়ের এই সুযোগ দিচ্ছে। এজন্য তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে অগমেডিক্স বিল্ডিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অগমেডিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পেলু ট্র্যান ও অগমেডিক্সের সহযোগী সংস্থাগুলোর কর্তাদের উপস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অগমেডিক্সের উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তিখাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্র পূরণে এবং ইমার্জিং টেকনোলজির জন্য এটা চমৎকার সুযোগ। দেশের মেধাবী যুবকদের কল্যাণে উদ্ভাবনী শক্তির উদাহরণ এই উদ্যোগ।’
তিনি আরও বলেন,‘বাংলাদেশের ৭ হাজার তরুণকে কাজের সুযোগ এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ দিচ্ছে অগমেডিক্স।আইসিটি মন্ত্রণালয় লিভারেজিং আইসিটি কর্মসূচির মাধ্যমে এই উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনবল সরবরাহের কাজ করছে।’
অগমেডিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পেলু ট্র্যান বলেন,‘বাংলাদেশের তরুণরা যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে।দেশটির ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়সই ২৫ এর কম। গুছিয়ে ইংরেজি বলা এবং ইংরেজি শুনে-বুঝে লিখতে পারে তারা। তাই অগমেডিক্সের মাধ্যমে আমেরিকার ডাক্তারদের সঙ্গে মেধাবী স্ক্রাইবদের সঙ্গে সংযোগ তৈরিতে বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ।’
তবে অগমেডিক্স বাংলাদেশ থেকে কেবল স্ক্রাইবারদের সরবরাহ করায় থেমে নেই।
অগমেডিক্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমাদুল হক বলেন,‘ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর সেবা দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সাড়াও পাচ্ছি ব্যাপক।শুধু আমেরিকা নয় বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে অগমেডিক্স। আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আমাদের প্রতিষ্ঠানে ৭ হাজারেরও বেশি তরুণকে নিয়োগ দেবো।’
২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইয়ান শাকিল ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা পেলু ট্র্যানের অগমেডিক্স।তাদের এই উদ্যোগে ১৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টিরও বেশি রাজ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষজ্ঞ ও সার্জনদের তাদের পরামর্শ লেখার সহায়তাকারী সরবরাহের সেবা দিয়ে আসছে।
আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক এই স্টার্টআপটির অপারেশনের প্রায় পুরোটাই পরিচালিত হয় ঢাকা থেকে। দেশে বেসরকারি পর্যায়ে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবেও প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে।
ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) পরিচালনা করে। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টার্টআপ হিসেবেও পুরস্কৃত হয়েছে। স্টার্টআপ হলেও এখন এটি প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান।