চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বন্যার্তদের সেবায় দরকার শুধু মানবিক উদ্যোগ

আমার জীবনের প্রথম পত্রিকায় লেখা ছাপা হয় বন্যার্ত মানুষদের নিয়ে, ভোরের কাগজে। ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন আজকের মতো শান্ত ছিলো না। গোলাগুলি লেগেই থাকতো। এর মধ্যেই হঠাৎ করে যেন পাল্টে যায় সবকিছু। বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাড়াতে থাকে সব ছাত্র সংগঠন। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক ছাত্রও।

আমি লিখেছিলাম, অস্ত্রের বদলে ছাত্ররা হাতে তুলে নিয়েছে রুটি তৈরির বেলুন। বন্যার কারণে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এবারও বন্যা হয়েছে। এর ভয়াবহতা ১৯৯৮ সালের বন্যার চাইতে কম নয়। তবে আগের চেয়ে পার্থক্য হচ্ছে, বানবাসী মানুষের অসহায়ত্ব এখন যেন আর কারো চোখে পড়ে না। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যতোটুকু আলোচনা, তার ছিটেফোটাও নেই বন্যা নিয়ে। কী সরকার, কী বিরোধীদল-কী সাধারণ মানুষ-সবাই যেন আমরা জেগে ঘুমাচ্ছি।

তবে এই লেখাটা কোন রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে নয়, সাধারণ মানুষদের প্রতি। আমাদের সবার মধ্যেই হয়তো একটা ধারণা কাজ করে যে, যতো দুর্যোগই আসুক তা মোকাবেলা করবে সরকার। আমাদের কারো যেন কিছুই করণীয় নেই। শুধু টিভিতে বা পত্রিকায় বন্যার খবর দেখা বা পড়া ছাড়া। অনেকে তা-ও করেন না। সত্যি কথা বলতে কি, আমিও এই দলে ছিলাম। উটপাখির মতো মুখ গুঁজে ছিলাম। তবে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছে আমার বন্ধু রাজুর একটি ফেসবুক পোস্ট। তিনদিন আগে সে এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা যারা সহপাঠী ছিলাম, শুধু তাদের উদ্দেশ্যে একটি আবেদন রেখেছে। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির বিবিএ মার্কেটিং তৃতীয় ব্যাচের প্রতি।

মূল কথা হলো, আমরা থার্ড ব্যাচের বন্ধুরা যার যার সাধ্যমতো বন্যার্তদের সাহায্য করতে যেন এখুনি উদ্যোগ নেই। আমরা সবাই সাড়া দিয়েছি। শুক্রবার থেকেই মার্কেটিং থার্ড ব্যাচের উদ্যোগে এই মহতী কাজ শুরু হবে।

এটি হয়তো একটি সামান্য উদ্যোগ। আমরা কোন সংগঠনও তৈরি করিনি। শুধু ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশে হাজার হাজার সংগঠন আছে, যারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে। প্রত্যেকটি সংগঠন যদি মানবিকভাবে বন্যার্তদের সেবায় এগিয়ে আসার চিন্তা করে তাহলেই একটি অসাধ্য সাধন করা যায়।

বন্যা দুর্গত এলাকার স্বচ্ছল মানুষদেরও এগিয়ে আসা দরকার। আর সারাদেশের একেবারে দরিদ্র মানুষরাও চাইলে একটি বড় অবদান রাখতে পারেন। এক কোটি মানুষ মাত্র দশ টাকা করে দিলেও দশ কোটি টাকা হয়। এটি দেয়ার সামর্থ্য একজন রিকশাওয়ালারও আছে। দরকার শুধু মানসিকতা। দরকার মানবিক উদ্যোগ। আসুন আমরা যার যার মতো এই দুর্গত মানুষদের পাশে দাড়াই।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)