সবুজ ঘাসের ওপর সতেজ গোলাপ-গাদার পাপড়ি। নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা মার্বেল পাথরের নিচু স্তম্ভে আজ শোভা পাচ্ছে সাদা গ্লাডিওলাস। ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি সেখানে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আজকের দিনে পরিবারের সবাইকে হারানো শেখ হাসিনা।
এই কবরের সারির একটু দূরেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন একই খুনি চক্রের বুলেটে বিদ্ধ তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং এম মনসুর আলী। তাদের কবরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতির অর্পণ করা পুষ্পার্ঘগুলো এখনো নানা নামের অঙ্গসংগঠনের দেয়া ফুলের নিচে চাপা পড়েনি।
সকাল সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে স্বজনদের কবরে ফুল দিয়ে, দোয়া করে শেখ হাসিনা বের হয়ে যান আটটার দিকে। এরপর নিরাপত্তার চরম কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হলে কালো-সাদা পোশাকে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
তবে সাধারণ মানুষ পূর্ণ শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ করলেও অনেকে কার আগে ফুল দিয়ে ঠিক উল্টো পাশে থাকা টেলিভিশনের ক্যামেরা আর ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরায় মুখ দেখাবে এই নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয়। এসময় পুলিশ ও কবরস্থান কর্তৃপক্ষ বারবার মাইকে ‘শোক দিবসের মর্যাদা’ এবং কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান জানান।
এরপরেও বেপরোয়া অনেকে এই আহ্বানের তোয়াক্কা না করে কবরস্থানের ভেতরেই স্লোগান দিতে থাকেন সমস্বরে।
এসময় ১৫ আগস্টে শহীদদের কবরের বিপরীতে থাকা কবরের ওপর উঠে নিজেদের নেতাদের ছবি তুলতে মোবাইল ফোন নিয়ে কসরত করেন অনেকেই। এছাড়া বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আবার বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিহতদের কবরের সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখা যায়।
এসব চিত্র পার হয়ে কবর সারির শেষ মাথায় আসতে দেখা যায় একাকী কয়েকজনকে। কালো পাঞ্জাবী পরা এক মধ্যবয়সী ফুলের ডালিতে থাকা কয়েক মুঠো গোলাপ পাপড়ি ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন সেখানে। এরপর দুহাত বুকের নিচে আড়াআড়ি রেখে দোয়া পাঠ করে মোনাজাত করেন তিনি।
সকাল ৮টায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বনানী কবরস্থান উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত চলতে থাকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও জিয়ারত। এরপর বেলা বাড়তে থাকলে কমে আসতে থাকে ভীড়।