চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রেমিকদের হাত খরচের পয়সা যোগাড় করতে চলছে অপহরণ নাটক!

ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে অপহৃত হয়েছেন উল্লেখ করে অপহরণকারীদের নম্বরে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলেন এক বোন। বোনের অসহায়ত্ব এবং বিপদের কথা ভেবে তাকে সাহায্য করতে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশের সহায়তায় এটি বের হয়ে আসে যে, অপহরণ নয়, প্রেমিকের হাত খরচের টাকা যোগাড় করতেই পরিবারের কাছে ওই অপহরণ নাটক সাজানো হয়েছিলো।

এমনই একটি ঘটনার কথা সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকে লিখেছেন, পাবনার পুলিশ সুপার জেহাদুল কবির। তার দেয়া এক পোস্টে তিনি ছদ্মনাম ও পরিচয় ব্যবহার করে শিউরে ওঠার মতো একটি ঘটনার বর্ণনা করেছেন। যা তিনি প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি সবাইকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তার লেখা অপহরণ নাটকের মূল চরিত্র যে নারী, তিনি পাবনার নার্সিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী। আর তার পরিবার থাকেন রংপুরে। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্প বলার ছলে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন এসপি কবির।

তিনি লিখেছেন:  “বাবা বাঁচাও, ভাইয়া বাঁচাও। ওরা আমাকে খুব টর্চার করছে, টাকা না পেলে আমাকে মেরে ফেলবে। তাড়াতাড়ি বিকাশে টাকা পাঠাও” ফোনটা কেটে গেল। মুহুর্তেই থমথমে ভাব নেমে এল। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল পারবতী (দিনাজপুর) পুরের মেয়ে রেশমার (ছদ্মনাম) পরিবারের সাথে। রেশমার ভাই পরক্ষণেই কল ব্যাক করতেই ফোন সুইচড অফ। দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গিয়েছিল। এক বার, দুই বার, হাজার বার চেষ্টা করেও ফোন খোলা পাওয়া যাচ্ছিল না।

বাসার সবাই চেষ্টা করছে, অপর প্রান্তে ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আধা ঘন্টা পর আবারও রেশমার ফোন থেকে কল। কাউকে বলার সুযোগ না দিয়েই কান্না জড়ানো কন্ঠে আবারো একই কথা। এইবার অবশ্য একটু বেশী কথা বলল সে। জানালো দুজন বোরকা পড়া মহিলা তাকে কৌশলে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে কোথাও এনে আটকে রেখেছে। সাথে কতগুলি নেশাখোর গোছের ষন্ডা মার্কা লোকও আছে। তাকে প্রচুর মার ধোর করছে। টাকা না পেলে তার সাথে কি হবে সে জানে না। আবারো গোঙ্গানির শব্দ। ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। এবার রেশমার অসুস্থ মা শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন। কত শখ করে পাবনার নার্সিং ইন্সটিটিউটে বোনকে ভর্তি করেছে রফিক (ছদ্মনাম)। বড় আদরের ছোট বোন। ওর কিছু হলে …… তারপর আর কিছুই ভাবতে পারছেনা।

মাঝে মাঝেই রেশমার ফোন আসে একই কথা “তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাও, পঞ্চাশ হাজার টাকা”। টানাটানির সংসার। তারপরও বোনের জীবন আগে। ধার দেনা করে টাকার যোগাড় হল। টাকা পাঠানোর আগে হঠাৎ রফিকের মাথায় একটা বুদ্ধি এল, পাবনা জেলার এসপি সাহেবকে বিষয়টা জানানো দরকার, কেননা পাবনা থেকেই তার বোন অপহরণ হয়েছে। তাছাড়া টাকা পেলেও যদি তার বোনকে না ছাড়ে। নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে ১৯/১১/২০১৭ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে সাত টার দিকে সে ফোন করে আমাকে। জানায় তার পুরো ঘটনা। এরপর মাত্র ৩ ঘন্টার ব্যবধান। রফিকের বোনকে ফিরে পায় রফিক। তবে রফিক খুশি হতে পারেনি। নীরবে শুধু চোখের জল ফেলেছে কিছুক্ষণ।

ঘটনা কিছুই নয়। প্রেমিকের হাত খরচের টাকা যোগাড় করতে রেশমার নিজের বানানো নাটকে নাস্তানাবুদ হয়েছে সবাই। পাবনা জেলা পুলিশের চৌকস দল ওঁত পেতে ছিল বিকাশের দোকানে (যে দোকানের নম্বরে টাকা বিকাশ করার কথা)। রেশমা টাকা ক্যাশ আউট করতে গেলে হাতে নাতে ধরা খায়। এই ঘটনায় কার কি হয়েছে জানি না, তবে বিশ্বাসের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা।

সবাইকে জেলা পুলিশ পাবনার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এমন ঘটনা প্রমাণিত হলে, দোষী ব্যক্তিকে কঠোর থেকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। যারা বিশ্বাসের অমর্যাদা করে তাদের ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ নেই। আধারের বুক চিরে স্নিগ্ধ আলোয় ভরে উঠুক আমাদের সকলের আঙ্গিনা। সবাই নিরাপদ থাকুন।’