আবাসন খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েক বছর ধরে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। আগামী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে এ খাতের জন্য আবারও একই দাবি জানাল সংগঠনটি।
এছাড়া এক সুদে দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণ-অর্থায়ন পদ্ধতি চালু, ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট কর ও ফি মিলিয়ে সর্বমোট ৭ শতাংশ নির্ধারনের চায় সংগঠনটি। একই সঙ্গে আবাসন খাতে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ, আবাসন শিল্প রক্ষার্থে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যমান মূসক (মূল্য সংযোজন কর) হ্রাসসহ নতুন কোনো মূসক আরোপ না করার সুপারিশ করেছে রিহ্যাব।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাবনা জানান রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া।
রিহ্যাব সহ-সভাপতি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে রিহ্যাব থেকে গৃহায়ণ শিল্পের উদ্যোক্তাদের আয়কর হ্রাস, গেইন ট্যাক্স ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে তহবিল প্রদানের মাধ্যমে আবাসন খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করা, রাজউক ও সিডিএর আওতাভুক্ত ও বহির্ভূত এলাকায় সকল জমির ক্ষেত্রে আরোপিত কর প্রত্যাহার, ক্রেতা, জমির মালিক ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোতে বিশেষ ঋণের প্রচলন করতে হবে।
নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ব্যয় নির্ধারণ করে আবাসন খাতে ‘সেকেন্ডারি বাজার’ ব্যবস্থার প্রচলনের দাবি জানিয়ে রিহ্যাবের এই নেতা বলেন, বিকেন্দ্রীকরণ নগরায়ন ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নে শহর এলাকায় ৫ বছর এবং শহরের বাইরের এলাকায় ১০ বছরের জন্য ‘ট্যাক্স হলিডের’ মাধ্যমে উৎসাহিত করা এবং সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উৎস কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে ৫ বছরের জন্য ডেভেলপারদেরকে অব্যাহতি দিতে হবে।
বর্তমানে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য তফসিলি ব্যাংকের গৃহ ঋণ বিতরণ বন্ধ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবাসন শিল্প রক্ষার্থে রি-ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এতে ক্রেতারা ঢাকা শহরের আশে-পাশে বা মিউনিসিপ্যাল এলাকার পার্শ্বে ১৫০০ বর্গফুট বা তার চেয়ে ছোট ফ্ল্যাট কিনতে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। এই ক্ষেত্রে ডিবিএইচ, আইডিএলসি, ন্যাশনাল হাউজিংয়ের মত অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ শর্তে গৃহ ঋণ দেয়া যেতে পারে। ফ্ল্যাটের সাইজের ওপর ভিত্তি করেও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া যেতে পারে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বাজেটে ন্যূনতম ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছি।
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য অর্থের উৎস প্রদর্শন না করার সুযোগসহ আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ১৯ বি ধারা পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানাচ্ছি। আবাসন খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৫-১০ বছরের জন্য গৃহায়ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ ফ্ল্যাট, প্লট, বাণিজ্যিক ভবন ও বিপণীবিতানে বিনিয়োগের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ- ১৯৮৪ এর ধারা ১৯ বিবিবিবিবি তে ইনডেমিনিটি রেখে এই ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন। এতে দেশের জাতীয় সম্পদ ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজস্ব উন্নয়নের বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে। কারণ সরকার ব্যবসায়ীদের প্রতি আন্তরিক।
এ সময় ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে রিহ্যাবের দেয়া প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।