ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের বিষয়কে অপপ্রচার হিসেবে আখ্যায়িত করে উপচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন: ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন ধরণের প্রমাণ আসেনি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে যদি বিন্দুমাত্র প্রমাণ আসতো তাহলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।
প্রশ্ন ফাঁস বিতর্কের সুরাহা না করে পরীক্ষার দুই দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে ফল প্রকাশ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এসময় তিনি বলেন: ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। আমরা এখন দেখব কারা এধরণের স্ট্যাটাস দেয়। এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করবো। যত ক্ষমতাধর হোক না কেন তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে।
রোববার দেড়টায় ফল প্রকাশের কথা থাকলেও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করেন। এসময় মিছিল দেখে কলাপসিবেল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে দুটি গেট ভেঙেই উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা।
এসময় অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষায় সোচ্চার থাকায় তোমাদের ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষার্থীরা যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলুক, আমরা এই সুযোগটুকু রাখতে চাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমি তোমাদের সঙ্গে সহমত পোষন করছি।
‘তবে একটি বিষয় জেনে মর্মাহত হলাম যে, তোমরা দুটি কলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেছো। আমাকে জানালে আমরা নিজে থেকেই আসতাম। তোমরা যা করেছো তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।’
ছাত্রদের এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন: একটি মিথ্যা ও অপপ্রচার দিয়ে পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনভাবেই কাম্য নয়। এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান জড়িত, সেশন জোট জড়িত, শিক্ষার্থীদের জীবন জড়িত। আমরা এখন তদন্ত করে দেখবো কোন অশুভশক্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই ঘন্টা পর এই ধরনের প্রচারণা চালালো।
‘আমরা তদন্ত করছি। ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে গণ্য করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা নিয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। আমরা সম্ভাব্য সকল বিষয় নিয়ে এর গোড়ায় প্রবেশ করবো। প্রমানিত হলে ক্রিমিনালকে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’আমরা ইতোমধ্যে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনেকে আটক করেছি। পরীক্ষার হলে তারা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস নিয়ে জালিয়াতি করেছে। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের জন্য তাদের আটক করা হয়নি।আমি এই অভিযোগ পেয়েছি শুক্রবার নামাজের পর। পরীক্ষার আগে এ ধরণের অভিযোগ পেলে পরীক্ষা বাতিল করতাম। কিন্তু এমন কোন অভিগোগ কেউ দেখাতে পারেনি।’
উপাচার্য জানান, তিনি সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা স্ক্রিনশটের বিষয় বুঝিয়েছেন। সুতরাং প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা-১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ঘ ইউনিটের এ পরীক্ষা। এ বছর এই ইউনিটের মোট ১ হাজার ৬১০টি আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন।
কয়েক স্তরের নিরাপত্তা এবং তদারকির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন হলেও সম্প্রতি পরীক্ষার আগের রাতেই ফাঁস হয়ে যায় চলতি শিক্ষাবর্ষের ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র। প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণসহ চ্যানেল আই অনলাইনসহ শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ এখনও তা অস্বীকার করে চলেছে।
ভিডিওতে দেখুন প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে ভিসির বক্তব্য: