চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রধান বিচারপতির নীরব বিদায় নাকি অপসারণ?

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকার এবং সংসদের মধ্যে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল তার ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি এখন নতুন মোড় নিয়েছে। খোদ সুপ্রিম কোর্ট থেকেই জানানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাদে আপিল বিভাগের বাকি পাঁচ বিচারপতিই তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কারণ: স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তাদের কাছে প্রধান বিচারপতির দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং নৈতিক স্খলনের যে দালিলিক তথ্যাদি উপস্থাপন করেছেন তার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে পারেন না। বিষয়টি তারা প্রধান বিচারপতিকে জানানোর পর তিনি প্রথমে পদত্যাগ করবেন বললেও পরে রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটির আবেদন করেন এবং রাষ্ট্রপতি তার ছুটি মঞ্জুর করেন। ছুটি কাটাতে প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাওয়ার আগে একথা বলে যান যে, একটি রায়কে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝানো হয়েছে যে কারণে প্রধানমন্ত্রী অভিমান করে আছেন। তিনি বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপের দিকেও ইঙ্গিত করে যান। তবে, তিনি চলে যাওয়ার পর শনিবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা বিস্ফোরকের মতো। খোদ রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যদি এরকম অভিযোগ থাকে তাহলে আমরা আর কোথায় ভরসা করতে পারি? আবার এটাও ঠিক যে, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সব অভিযোগই প্রকাশ্য হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ার পর। বিষয়টা এরকম নয় যে, প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটা আগে কেন সরকার জানতে পারলো না? আর জানলে কেন তাকে প্রধান বিচারপতি করা হলো বা বিচার বিভাগেই বা কেন রাখা হলো? আবার এসব যদি ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মামলার রায়ের পরই জানা যায়, তাহলেও শুধু এ কারণেই তিনি দুর্নীতির দায় এড়িয়ে যেতে পারেন এমন না। প্রধান বিচারপতি যদি অসদাচরণ করেন কিংবা মানসিকভাবে অসু্স্থ বা শারীরিকভাবে অসমর্থ হন, অথবা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তাকে অপসারণ করা যেতে পারে। কিন্তু, সে প্রক্রিয়াটা কী হবে? অবশ্যই তা সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। সুষ্ঠুভাবে তদন্ত কার্যক্রম চলতে দিতে হবে। এটা এখন স্পষ্ট যে, আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তার সঙ্গে যেহেতু আর একই বেঞ্চে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন, তাই সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পক্ষে ছুটি শেষে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলেই মনে হয়। তাহলে কি তিনি মেয়াদের বাকি কয়েক মাস ছুটিতে থেকেই স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যাবেন? নাকি তাকে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে? নাকি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে অপসারণ করা হবে? যেটাই হোক, জনমনে যেন এরকম কোন ধারণা না হয় যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রের অন্য কোন অঙ্গ দ্বারা অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। সেরকম ধারণা যেন না হয়, কিংবা এস কে সিনহা যেন আসলেই কোন অন্যায়ের শিকার না হন- সেটা রাষ্ট্রের সেই অঙ্গগুলোকেই নিশ্চিত করতে হবে।