অনেক বড় অর্জন একটুখানি ভুলের কারণে বা কারো ভুল পরামর্শে নষ্ট হয়ে গেলে খুব আফসোস লাগার কথা। যে আফসোস হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষদের। যারা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেন অন্য আলোয়। অন্যরকম শ্রদ্ধায়।
বাংলাদেশের আর কোনো নেতা এত জেল জুলুম সহ্য করেন নি, যতটা করেছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি যারাই পড়েছেন তারা নির্দ্বিধায় বলে দেবেন বঙ্গবন্ধু কোন পর্যায়ের নেতা ছিলেন বাংলার জনগণের কাছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই পর্যায়ের নেতা যে পর্যায়ের নেতা হলে স্মৃতিসৌধও নুয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
সেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আবার যদি পাকিস্তানী ভাবধারার উগ্রপন্থী কোনো দলের উত্থান ঘটে তা হলে কিভাবে তা মেনে নেবে সেই জনগন।
হেফাজতে ইসলামকে কেন সঙ্গে রাখতে হবে? যে হেফাজত ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। যাদের উসকে দিয়েছিল সেই সময়ের বিরোধী দল। সেই হেফাজতকে কেন সঙ্গে রেখে দলকে ভারি করতে হবে? বোধগম্য হয় না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলার মাটিতে আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে যে সাহস আর দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা কেবল বঙ্গবন্ধুর কন্যার দ্বারাই সম্ভব। এই অর্জনের মাধ্যমে দেশের মুক্তচিন্তা আর উদার মনের মানুষের মনে আপনি যে আসন করে নিয়েছেন তা কেন ওই হেফাজতকে কাছে টানার কারণে নষ্ট হয়ে যাবে? কেন আপনি তাদের কাছে টেনে সরকার বিরোধী শক্তিকে কথা বলার সুযোগ করে দিবেন?
আপনি কি মনে করেন হেফাজত আপনার পাশে থাকবে সব সময়? তারা আপনাকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনবে? এমনও তো হতে পারে তারা বিরোধী শক্তির কৌশল হিসেবে আপনার টোপে পা দিয়ে তাদের সব অন্ধকারাচ্ছন্ন চিন্তার বাস্তবায়ন করে নিচ্ছে। তারা শর্তহীনভাবে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। এরপর ভাস্কর্য সরিয়ে নেবার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভাস্কর্য না সরালে তাদের পাশাপাশি অন্য ইসলামী দলগুলোও আন্দোলন চালানোর হুমকি দিতে শুরু করেছে। একবার ভাবুন কি হতে যাচ্ছে দেশের ভেতর। মাত্র কদিন আগেই কওমী শিক্ষার স্বীকৃতি আদায় আর এরই মধ্যে ইসলামী দলগুলোর আন্দোলন শুরু। কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই আন্দোলনের জের, একবার ভেবে দেখবেন কি?
এখন তো বিরোধী দল বগল বাজাচ্ছে হেফাজতের সঙ্গে।জোট বাঁধার কারণে। তারা যে পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছে না, তা কি বলা ভুল হবে?
আপনার অনেক বড় অর্জন শুধু হেফাজতকে কাছে টানার কারণে নষ্ট হয়ে যাবে, আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব কি পড়বে না? যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, যারা প্রগতির কথা বলে তারা ব্যালট পেপার হাতে পেয়ে আপনার প্রতীকে সিল মারার আগে একবার যদি ভাবে কাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। যারা নারীকে তুলনা করেন তেঁতুলের সাথে। যারা নারীর বাইরে কাজ করা নিয়ে কটূক্তি করে, কেন সিলটা ওই প্রতীকে মারব? যদি এই চিন্তাটা মাথায় আসে তাদের!
হেফাজত কখনো আওয়ামী লীগের বন্ধু হতে পারে না। কোনোদিন তারা আওয়ামী লীগের কাছের মানুষ হতে পারে না। তারা তাদের স্বার্থ হাসিল হবার পর ঠিকই সাপের মত ফণা তুলবে, ছোবল মারার জন্য।
আরেকটা কথা, একবার যদি ক্ষমতা হাত থেকে চলে যায় তা হলে বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে ছাড়বে এই হেফাজত। তারা তখন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হাত মেলাবে। আর দেশটাকে পাকিস্তানী ভাবধারায় চালানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলো তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচার কাজ সুচারুভাবে করার জন্য আপনাকে দৃঢ় মনোবল গড়তে লেখনি দিয়ে সহায়তা করেছিল, রাজপথে আন্দোলন করেছিল তাদের অবস্থা কি হবে ভাবুন তো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের যে অর্জন, তা নষ্ট হতে দেয়ার আগে একবার কি ভাববেন, হেফাজতকে কেন সঙ্গে নিতে হবে? এই হেফাজতের ভেতরে কাদের প্রেতাত্মা আছে? তাদের আসল চেহারাটা কি রকম ছিল মতিঝিলে, সেই ২০১৩ সালের ৫ মে’র ভয়াল রাতে?
যে বঙ্গবন্ধুর কাছে শ্রদ্ধায় স্মৃতিসৌধও নুয়ে যায়, আপনি তাঁরই সুযোগ্য কন্যা। বাংলার মানুষ, যারা ভাবে আপনার মাধ্যমে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক, তাদের কথা একবার ভাবুন। একবার।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)