চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: বিদ্যুৎ জ্বালানিতে ১১ চুক্তি ও সমঝোতা

আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার নতুন ধাপে পৌঁছতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতদিন শুধু বিদ্যুতেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন শুরু হবে সব জ্বালানির বাণিজ্য। ভারতের জন্য বড় বাজার তৈরি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এখন ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। আরও বিদ্যুৎ আনবে। সাথে যোগ হবে, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস, তরল গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ আর জ্বালানি তেল। আনা হবে ভারতের মালিকানাধীন নেপাল ভুটানের বিদ্যুৎও। এই সহযোগিতায় ভারত সরকার যেমন এগিয়ে আসছে তেমনই আসছে ভারতের প্রথমসারির বেসরকারি উদ্যোক্তারাও।

জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ বড় কয়েকটা দেশের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশি ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকেই মূলত এই উন্নয়ন সহযোগিতায় পাশে নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পর চীন, জাপানের সাথেও যৌথ কোম্পানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে জ্বালানিখাতের যে সহযোগিতার তালিকা করা হয়েছে তা একেবারে ছোট নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের মোট ১১টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর মধ্যে বিদ্যুতের ছয়টা এবং জ্বালানিতে পাঁচটা চুক্তি হওয়ার কথা।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন। ভারতের সাথে এসময় নিরাপত্তাসহ মোট ৩৩টা চুক্তি ও সমঝোতা হওয়ার কথা। এরমধ্যে ১১টাই হবে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের। দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নসহ দুদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে যৌথ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে এক্সিম ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি, ত্রিপুরা থেকে আরো ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল চর্তুদেশীয় বিদ্যুৎ গ্রীড, ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সঞ্চালন লাইন করা এবং ভারতের রিলায়েন্সের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হবে। এছাড়া ভারত থেকে তেল আমদানি ও বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়েও সমঝোতা বা চুক্তি হবে।

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ঋণ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। ঋণচুক্তির খসড়া এরইমধ্যে বাংলাদেশ ইণ্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) বোর্ড সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঋণের জামিনদার থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এই ঋণচুক্তি করবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি বিআইএফপিসিএল।

ভারতের ত্রিপুরার সূর্য মণিনগর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিশালগড় মহকুমার কৈয়াঢেপা সীমান্ত হয়ে বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। এই পথে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এর দাম নিয়ে এতদিন দুই দেশ সমঝোতায় পৌছতে পারেনি। এখন তা ঠিক হয়েছে। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ রুপি ৫৪ পয়সা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ছয় টাকা ৩১ পয়সা।

ভারতের আদানি গ্রুপ ঝাড়খণ্ড প্রদেশে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এজন্য আলাদা সঞ্চালন লাইনও করা হবে। এই সঞ্চালন লাইন করার জন্য বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) এর সঙ্গে চুক্তি করবে আদানি। আদানি গ্রুপের কাছ থেকে এই বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ছয় টাকা ৯৩ পয়সা দরে কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভারতের নতুন আইন করার ফলে নেপাল থেকে বাংলাদেশের সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ নেই। নতুন আইনে ভারত কাউকে বিদ্যুতের ট্রানজিট দেবে না। তবে নেপাল বা ভুটান থেকে ভারত বিদ্যুৎ কিনে তা আবার বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে পারবে। যেহেতু ভারতের ভূমি ব্যবহারের বিকল্প নেই তাই ভারতের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার উদ্যোগ নিয়েছে। নেপালে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। বাংলাদেশ সেই বিদ্যুৎ কিনতে যাচ্ছে। এজন্য ত্রিপক্ষীয় একটি সমঝোতা চুক্তি সই হবে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল চর্তুদেশীয় বিদ্যুৎগ্রীড নির্মাণে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের সঙ্গেও চুক্তি হবে।

জ্বালানি খাতের পাঁচটা চুক্তি ও সমঝোতা হবে। এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে এলএনজি আমদানির জন্য স্থলভাগে টার্মিনাল স্থাপন করবে বাংলাদেশ। এজন্য ভারতের পেট্রোনাসের সাথে পেট্রোবাংলার সমঝোতা চুক্তি হওয়ার কথা। তেল আমদানির জন্য পাইপলাইন স্থাপনে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সাথে ভারতীয় অয়েল করপোরেশনের সমঝোতা চুক্তি হবে।

এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে রিলায়েন্সের সঙ্গে সমঝোতা, প্রশিক্ষণের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাথে সমঝোতা এবং ভারতের নুমালীগড় থেকে তেল আমদানির জন্য অনুসাক্ষর করা হবে।

বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এই সহযোগিতা বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)