চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রতিপক্ষ হিসেবে নর্থ কোরিয়া কতোটা শক্তিশালী?

সংখ্যার দিক থেকে নর্থ কোরিয়ার সেনাবাহিনী অনেক বড় এবং খুবই কার্যক্ষম। কর্মক্ষমতার দিক থেকে এ সেনাবাহিনীর অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এছাড়া দেশটির প্রধান নেতা কিম জং উনের মধ্যে অস্থির ও আক্রমণাত্মক স্বভাব রয়েছে। পারমানবিক বোমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে উড়িয়ে দেয়ার হুমকির মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।পাল্টা জবাব দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও। পরিস্থিতি এমন যেন ‘যেকোনো সময়’ যুদ্ধ লেগে যাবে।

এই ধরণের হুমকি ও পাল্টা হুমকি নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্বেগের কিছু আছে কি? প্রতিপক্ষ হিসেবে নর্থ কোরিয়া ঠিক কতোটা শক্তিশালী?

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু দেশটির একটি বিশাল বড় সংখ্যার সেনাবাহিনী রয়েছে, তাই তাদেরকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি যুদ্ধের জন্য বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র ও বোমা-বারুদের মজুদও রয়েছে তাদের। শুধু সাউথ কোরিয়ার সীমান্তেই নর্থ কোরিয়ার প্রায় ১৩ হাজার বন্দুকধারী রয়েছে বলে জানা গেছে।নর্থ কোরিয়া যদি সাউথ কোরিয়া বা অন্য যেকোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে একবার আক্রমণ করে বসে, তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক অবস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।যা দেখে হয়তো সেনাবাহিনীর শক্তির দিক থেকে ব্যাপক পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলোও বিস্মিত হতে পারে।

নর্থ কোরিয়ার তরুণ প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। যিনি বার বার যুক্তরাষ্ট্রকে উড়িয়ে দেবার হুমকি দিয়ে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন

বলা হচ্ছে, নর্থ কোরিয়ার প্রায় ১০ লাখ ১০ হাজার থেকে ছয় লাখ নব্বই হাজারের মতো কার্যক্ষম সেনাবাহিনী রয়েছে।পাশাপাশি এটিও শোনা যায় যে, দেশটির চল্লিশ লাখ ১০ হাজার থেকে সত্তর লাখ ৭০ হাজার মতো সৈন্য মজুদ রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে তাদের কাজে লাগানো হবে। তাই স্বাভাবিকভাবে নর্থ কোরিয়া একটি হুমকি।তবে তা অবশ্যই সীমিত সময়ের জন্য এবং নিকটবর্তী দেশগুলোর জন্য এ হুমকির মাত্রাটা একটু বেশি।

শনিবার পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত এক সামরিক মহড়াতে নানা ধরনের মিসাইল, অস্ত্র এবং বিপুল সংখ্যক সৈন্য দিয়ে শক্তি দেখানো হয়

তবে দেশটির বিমান বাহিনী এবং নৌ-বাহিনী চরমভাবে সেকেলে ও প্রচুর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এ তথ্যও বেরিয়ে এসেছে যে, দেশটি প্রায়ই তেলের স্বল্পতার জন্য তাদের সব উড়োজাহাজ চালাতে পারে না এবং সঙ্গত কারণেই তাদের পাইলটদের আকাশে উড়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই কম।একই অবস্থা নৌ-বাহিনীতেও। সেকেলে প্রযুক্তি ও জ্বালানীর অভাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশ একবার নর্থ কোরিয়ার উপর আক্রমণ চালায়, তাহলে খুব সহজেই নর্থ কোরিয়াকে আত্মসমর্পন করতে হবে।দেশটি ইতোমধ্যে খাদ্য ও জ্বালানী নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে বিগত কয়েক মাস ধরে পর পর মিসাইল পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে নর্থ কোরিয়া

অনেকেই বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধ হোক বা না হোক, নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের দাপট বেশি দিন টিকবে না। কারণ তার সেনাবাহিনীর মধ্যে কিছুদিন পর পরই অভ্যুত্থান বা চেইন অব কমান্ড না মানার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কিছুই বিশ্ববাসীকে জানতে দেয়া হয় না। এর কারণ সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের বিষয়ে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি, কঠোরতা ও অনিয়ম চরমে পৌঁছেছে। ফলে জনগণ ও নেতৃত্বের মধ্যে দুরুত্ব আরও বেড়েছে। আর এ কারণেই বিদ্রোহের মতো ঘটনা বেশি ঘটছে।

সার্বিকভাবে বলা যায় যে, একটি বোমা বা মেশিনগান যেমন হুমকি, তেমনি নর্থ কোরিয়াও একটি হুমকি। তবে তা কোনো সুপার পাওয়ার বিশিষ্ট দেশ বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতো নয়। আল-কায়েদা এখন যেভাবে বিধ্বংসী মতবাদ ছড়িয়ে যাচ্ছে বা স্নায়ুযুদ্ধের সময় রাশিয়া যেভাবে অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছিলো, পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নর্থ কোরিয়ার সেরকম কোনো শক্তিও নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প এবং নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উ্ন। মজা করে বলা হচ্ছে, পারমানবিক বোমার থেকেও এই দুইজনের মেজাজ ধ্বংসাত্মক বেশি

নর্থ কোরিয়ার শক্তির এই আলোচনা দিন শেষে এসে গড়াবে দেশটির পারমানবিক সক্ষমতার উপর। সুতরাং মূল প্রশ্নটি হচ্ছে তাদের পারমানবিক বোমা আছে কি না? এক্ষেত্রে উত্তর হচ্ছে -‘না’। নর্থ কোরিয়ার কোনো পারমানবিক বোমা নেই। এখানে বলে রাখা ভালো যে, পারমানবিক বোমার ‘পরীক্ষা’ চালানো আর পারমানবিক বোমা বা অস্ত্র থাকা দুইটি ভিন্ন বিষয়। কারণ বোমা তৈরিতে সফল না হয়েও সফলভাবে এর পরীক্ষা চালানো সম্ভব।

তবে পারমানবিক বোমা তৈরির সকল প্রকার কাঁচামাল নর্থ কোরিয়ার রয়েছে। কারিগরি দুর্বলতার কারণে বোমা তৈরির এ উদ্যোগ দূর পাল্লার টর্পেডোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।তবে কেউ কেউ এর দ্বি-মতও পোষণ করেছেন।তাই বলা যায় যে সেই অর্থে নর্থ কোরিয়া পারমানবিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না, যতোটা কিম জং উনের হুমকির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে।