শুরু হচ্ছে দেশের প্রযুক্তিখাতের সবচেয়ে বড় আসর ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৭’। এবারের আইসিটি এক্সপোতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে আন্তর্জাতিক অনলাইন লেনদেন মাধ্যম পেপ্যাল। তথ্য-প্রযুক্তি প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশে পেপ্যাল সেবা উদ্বোধনের ঘোষণা আগেই দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
সে প্রেক্ষাপটে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগও বলছে, ১৯ অক্টোবর দেশে পেপাল সার্ভিস যাত্রা শুরু করবে। তবে পেপ্যাল সেবা নাকি পেপ্যালের সহ-প্রতিষ্ঠান জুম সেবা চালু হবে, তা নিয়ে নানা মহলে সংশয়-গুঞ্জন রয়েছে।
পেপ্যালের উদ্বোধনের বিষয়ে আইসিটি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘পেপ্যাল ইনবাউন্ড লেনদেনে বিদেশ থেকে টাকা দেশে আসে আর আউটবাউন্ডে টাকা দেশ থেকে বিদেশে যায়। বাংলাদেশে আপাতত পেপ্যাল ইনবাউন্ড সেবা চালু হবে। তাই পেপাল নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেয়ে এটাকে পেপ্যাল সার্ভিস বলাই ভালো।’
আইসিটি বিভাগের এই নিশ্চয়তার ওপর আস্থা রাখছেন দেশের প্রযুক্তিখাতের পরিচিত ব্যক্তিত্ব মোস্তফা জব্বার। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,’পেপ্যাল সার্ভিস চালু হবে এটা আমি সরকারের আইসিটি বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি। এটাকে তাই সঠিক মনে করছি। কারণ এই তথ্যটি কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে পাইনি।’
আপাতত পেপ্যালে বিদেশ থেকে টাকা আসবে, এমন সেবা চালু হওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখেন এই প্রযুক্তিবিদ। তিনি আরও বলেন,’ পেপ্যালের মত বড় প্রতিষ্ঠান হুট করে এই দেশে তার সব সেবা চালু করবে, এটা না হওয়াই স্বাভাবিক। হয়তো পেপ্যালের ওয়ালেট এখন চালু হচ্ছে না। কিন্তু বিদেশ থেকে টাকা আনার পথটা উন্মুক্ত করছে। দেশের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিলো বিদেশ থেকে টাকা পাওয়া। এখন পেপ্যালের এই সার্ভিস চালু হলে সেই চ্যালেঞ্জ আর থাকছে না। এটা অবশ্যই ইতিবাচক।’
পুরোদমে চলছে আইসিটি এক্সপো প্রস্তুতি
আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে চলছে ভীষণ ব্যস্ততা। কারণ মাত্র আর একদিন পরেই শুরু হবে দেশীয় প্রযুক্তিখাতের সম্ভাবনা বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার আসর ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো’। টাওয়ারের ১০ম তলায় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশাল কর্মযজ্ঞের একেবারে চূড়ান্তে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, নিমন্ত্রণ কার্ড, অতিথি ব্যবস্থাপনা তদারকির কাজ চলছে পুরোদমে।
কম্পিউটার সমিতির একটি কক্ষে ল্যাপটপ স্ক্রিনে উদ্বোধনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়গুলো ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত কয়েকজন। ফাইল-প্রিন্ট করা কাগজ আর আইসিটি এক্সপো কার্ডের স্তুপ টেবিলে। এখানে যখন এই অবস্থা তখন পাশের কক্ষে চলছিলো গোটা আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ বৈঠক।
এই বৈঠকের ফাঁকে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে এক্সপো’র প্রস্তুতির সর্বশেষ তুলে ধরেন দেশের তথ্য-প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আসরের উদ্যোক্তা বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক কল্যাণ কুমার সরকার এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সহকারি মহাব্যবস্থাপক মো. হাসানুজ্জামান।
কল্যাণ কুমার সরকার বলেন,‘এবারের আসরে আমরা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি আহ্বান জানাচ্ছি। সেটি হচ্ছে ‘মেক ইন বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিশ্বকে এই বার্তা দেয়া হবে এই আসরে।’
হাসানুজ্জামান জানান,সোমবার থেকেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাজ-সজ্জা ও স্টল-প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখানে ৫৪ টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ৬২ টি প্যাভিলিয়ন ও ৬৭ টি স্টল তৈরি হচ্ছে। ৩ দিনের প্রদর্শনীতে সেলফি প্রতিযোগিতা, কুইজ, গেমিং , ড্রোন উড়ানো, প্রযুক্তিখাতের দেশিয় তারকাদের সঙ্গে আলাপ এবং চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
বিশাল এই কর্মযজ্ঞ তত্ত্বাবধান করছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।
আইসিটি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.আবু নাছের চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘নামমাত্র শুল্কে এবং রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনায় দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়। প্রযুক্তি পণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে একসময় রপ্তানিকারক হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। এই সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবারের আইসিটি এক্সপো’র স্লোগান ‘মেক ইন বাংলাদেশ।’
সম্ভাবনার এসব বার্তা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো শুরু হচ্ছে ৩ দিনের এই প্রদর্শনী। এখানে দেশীয় উৎপাদনকারী, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, বিশেষ ছাড়ে বিক্রয়সহ নানারকম আয়োজন হবে মোট ১০ টি জোনে। সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে প্রদর্শনী চলবে রাত ৮ টা পর্যন্ত। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত তবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কিংবা ভেন্যুতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রদর্শনী ঘিরে থাকবে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।