চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পুলিশের হাত-পা কি কালো ধাতববস্তু দিয়ে বাঁধা

পুলিশকে ব্যর্থ বলছি  না। পুলিশ ব্যর্থ হলে অন্য কোন ‘শক্তিধর’ ছড়ি ঘোরাবে, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে তা কারো জন্যেই মঙ্গলজনক নয়।

পুলিশ প্রধান, তিনি সম্মানিত নাগরিক। অনেক দায়িত্ব তার উপর। আর তিনি যখন বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা পুলিশ দিতে পারবে না’ তখনও মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয় না পুলিশ থেকে।

কুমিল্লার সাধারণ ঘরের একটা মেয়ে সোহাগী জাহান তনু। তিনি নাটক করতেন। মেয়েটাকে ছিদ্রহীন নিরাপদ এলাকার ভেতরে হত্যা করা হল। ৫০ দিন চলে গেছে। সেই মেয়েটার খুনিদের ধরাতো দূরের কথা শনাক্তও করতে পারেনি পুলিশ। তনুর অসহায় বাবা খুবই নির্বিকারভাবে বলেছেন,‘মেয়ে হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য মেধাবী এক শিক্ষক অজয় রায়। তিনি কেবল বাংলাদেশের নন, বিশ্বমেধা। তার সন্তান মুক্তমনের লেখক ড. অভিজিত রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারা হল গেলো বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। পুলিশ এখনো খুনিদের ধরতে পারল না। অভিজিতের বাবা অজয় রায় নিজেকে ‘বিধ্বস্ত পিতা’ মেনে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কেউ কেউ তাকে ‘চুপ’ থাকতে বলেছেন। পুলিশ তাকে সান্তনা দিয়েছে এই বলে, তার ছেলের খুনিরা নজরদারিতে রয়েছে। তারপর একদিন খবর এলো খুনিরা বিদেশে চলে গেছে। অজয় রায় প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কি ঘোড়ার ডিম নজরদারি করল পুলিশ?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জনপ্রিয় শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক। তার ছেলে ফয়সাল আরেফিন দীপন। তিনি বইয়ের প্রকাশক ছিলেন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হল। ছেলে হারিয়ে হতবিহ্বল পিতা। কাঁদলেন। তার কান্নামাখা মুখের ছবি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়লো দুনিয়াময়। শিক্ষকের এই ছবিটা দেখলে আমাদের বুক ভেঙে যায়। বড় অসহায় মনে হয় এই বেঁচে থাকাকে। বড় অসময়ে সন্তান হারিয়ে, পরিস্থিতি বোঝে আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছিলেন, তিনি বিচার চান না।

দুনিয়াজুড়ে নিজের ঘরকে এক ধরণের নিরাপদ জায়গা মনে করা হয়। সাগর এবং রুনীর জন্য তাদের ঘরও তেমন ছিল। সেই নিজ ঘরেই কারা যেন খুন করে গেল দুজনকে। আমার স্থির মনে আছে, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আইনের মানুষ সাহারা খাতুন। তিনি বলেছিলেন, ’৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে।’ তারপর সাহারা খাতুন গেছেন। ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর গেছেন, এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পুলিশ আজও কুল-কিনারা করতে পারেনি সেই খুনের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক খুন হলেন। সবশেষ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী। গানের মানুষ ছিলেন তিনি। তার খুনিদের ধরতে  পারছে না পুলিশ।

একটার পর একটা খুনের ঘটনা ঘটছে। একটার শোক কাটতে না কাটতেই ঘটছে আরেকটা। পরিস্থতি ঘোলাটে করার জন্য এমন ঘটানো হচ্ছে বলে সরকারের অনুমান। তবে কারা করছে তা বলতে পারছে না সরকার।

কলাবাগানের জোড়া খুনের ঘটনায় নতুন করে একটু বেকায়দায় পড়তে হয় সরকারকে। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান আর নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে। এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি খুনিদের ধরতে সরকারকে ‘মধুর চাপ’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোনে কথা বলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ঢাকায় উড়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই। তিন দিনের সফরে তিনি বাংলাদেশকে এই বলে প্রস্তাব দেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় পাশে থাকতে চায় আমেরিকা। বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে কীভাবে সাড়া দিয়েছে, আদৌ দিয়েছে কি না তা কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি।

এতো শিক্ষক খুন, এতো নাট্যকর্মী খুন, সাংবাদিক হত্যা, মুক্তমনের লেখককে মেরে ফেলা- একটি ঘটনারও সুরাহা করতে পারছে না পুলিশ।

তাহলে প্রশ্ন, পুলিশ করে কী? তাদের কাজ কী? নাকি তাদের হাত এবং পা বাঁধা আছে নিকষ কালো কোনো ধাতববস্তু দিয়ে। তাদের চোখ এবং কান বন্ধ করে দিয়েছে কেউ?

তা যদি হয়েই থাকে সেটাও খুলে বলুক পুলিশ, কেনো না তারাতো এদেশেরই সন্তান।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল
আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)