পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মূল্যায়নের চিন্তা করছে। কিভাবে মূল্যায়ন তা খোলাসা করে বলেননি মন্ত্রী। আমার মনে হয় সরকারের উচিত হবে এ নিয়ে সংসদের ভেতরে বাইরে আলোচনা করা। প্রয়োজনে এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গেও আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কারণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অবঃ) মাহবুবুর রহমানও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গেও আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এতদিন পাকিস্তান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির পর তারা একাত্তরে গণহত্যার দায় এড়াতে চেয়েছে! এই অসভ্য ফ্রড রাষ্ট্রটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র কখনো ছিলো না হতেও পারে না। বাংলাদেশের জন্মশত্রু এমন একটি শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রকারের সম্পর্কও অপ্রয়োজনীয়। এই শত্রু রাষ্ট্র্রটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়ে সংসদের ভেতরে বাইরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার।
বাংলাদেশের রাজনৈ্তিক সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাশ করে দেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। যেখানে পৃথিবীর কোথাও মানবাধিকারের অপরাধের বিচারে আপিলের নজির নেই, বাংলাদেশের এসব ঘৃণ্য অপরাধী দেশের সুপ্রীমকোর্টে আপিলের সুযোগও পাচ্ছে। আর পাকিস্তান যার নিজের কাপড়চোপড়ের খবর নেই সে যখন আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষার এই বিচার নিয়ে যখন ধৃষ্ট কথাবার্তা বলার দুঃসাহস দেখিয়েছে, তাকে কোথাও এক ইঞ্চি ছাড় নয়।
এই সুযোগে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের হেড কোয়ার্টার পাকিস্তানকে সংসদের মাধ্যমে অফিসিয়ালি প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে তারা একাত্তরের গণহত্যার দায় নিয়ে অফিসিয়ালি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইবে কিনা। বাংলাদেশের পাওনা বুঝিয়ে দেবে কিনা।
সিমলা চুক্তি অনুসারে বিচারের নামে তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে অথবা বিচারের জন্যে তাদেরকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে কিনা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করবে কিনা। এসব বিষয়ে অফিসিয়াল জবাব দেবার জন্যে সময় বেঁধে দিতে হবে পাকিস্তানকে।
এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তান সন্তোষজনক জবাব না দিলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিতে হবে। এখন বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা আছে এই পাসপোর্টে ইসরাইল যাওয়া যাবে না। সেখানে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে পাকিস্তানের নাম।
যে কোনো দেশ-রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক ঘটনা থাকে। বাংলাদেশের সেই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনাটির নাম মুক্তিযুদ্ধ। এই রাজনৈতিক ঘটনাটির সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত। পাকিস্তান নামের মোল্লা রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। পাকিস্তান সেই মুক্তিযুদ্ধকে পন্ড করতে একাত্তরে বাংলাদেশে শুধু গণহত্যা চালায়নি। বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব শয়তানিই করে আসছে।
বাংলাদেশ যাতে স্বাধীন দেশ হিসাবে জাতিসংঘের সদস্য হতে না পারে এরজন্যে তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের মাধ্যমে শেষ মূহুর্ত অবধি চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তান। সে চেষ্টা ব্যর্থ হবার পরও তারা হাল ছাড়েনি। পচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে যে পাকিস্তান জড়িত তা খুনিদের পক্ষে তাদের তড়িৎ সব সমর্থনে লুকোছাপা থাকেনি। এরপর আবার জিয়া-এরশাদ-খালেদার আমলে পাকিস্তানি আইএসআই’র অবিরাম হাত বাড়ে বাংলাদেশে! বাংলাদেশে আজ যত জঙ্গি তৎপরতা এসবের নেপথ্যে পাকিস্তান আছে।
২১ আগষ্টের গ্রেনেড হত্যামামলার আসামি মাওলানা তাজুল পালিয়ে গেছে পাকিস্তানে। যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেছে পাকিস্তানে। জঙ্গি সন্ত্রাসের পাশাপাশি বাংলাদেশে মাদক-জাল টাকা পাচার সহ যত দুই নাম্বারি আছে সবকিছুর নেপথ্যে আছে পাকিস্তানের কালো হাত! সব মিলিয়ে এই ফ্রড রাষ্ট্রটির সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক কিছু নেই। আগেও ছিলো না এখনও নেই। এমন একটি অসভ্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা কোনো রকম সম্পর্ক রাখবোই বা কেনো? বিষফোঁড়া ওষুধ খাইয়ে মিলিয়ে দেয়ার দরকার নেই। অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলে দেওয়াই ভালো।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাগরিক সমাজ পাকিস্তানে থাকা ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের বিচারের উদ্দেশে আবার একটি গণআদালত সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে পারেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃ্ত্বের গণআদালতের সেই প্রতীকী বিচারের ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। সেই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের লক্ষে গণআদালত গঠন করা হলে তা নতুন একটি আন্দোলনের সৃষ্টি করবে। যা নিশ্চিত করবে আগামিতে তাদের আইনত বিচার। পাকিস্তানের বিপক্ষে দেশের মানুষের ঘৃণার আগুল ছড়িয়ে দিতে আরও যা যা করার দরকার এর দিক নির্দেশনা দিতে পারে নাগরিক সমাজ।
মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধবস্ত দেশ সামাল দিতে আমরা অনেক যা কিছু তখন করতে পারিনি, এখন তা পারি। এখন আমরা নিজের টাকায় পদ্মাসেতু বানাতে পারি। আমেরিকার মতো বিশ্ব মোড়লকে গণায় না ধরেও নিজের শক্তিতে সাহসে চলতে পারি। অতএব আমাদের জন্মশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অলআউট একশনের এখনই সময়।
আমার বিশ্বাস বাংলাদেশে আজ যতো জঙ্গি সন্ত্রাস পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের মাধ্যমেই এর অনেকটা কমে যাবে। কমে যাবে বাংলাদেশের মিডিয়ায়-রাজনীতিতে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের দাপট। আমাদের জন্মশত্রু যার সঙ্গে আমাদের সাত-সতেরো কোনো কিছুতেই হবেনা তার ঔদ্ধত্য সহ্য করে চলার জন্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। এটাই আমাদের সাফ কথা। সাফ হিসাব।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)