বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পর্তুগীজ রানা তাসলিম উদ্দিন দ্বিতীয় মেয়াদে লিসবন সান্তা মারিয়া মাইওরের কাউন্সিলর হয়েছেন। ১ অক্টোবরের এই নির্বাচনে রানা তাসলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পর্তুগালের ক্ষমতাসীন পর্তুগিজ স্যোসালিষ্ট পার্টি (পিএস) থেকে। এর আগে ২০১৩ সালেও তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় রানা তাসলিম বলেন, পর্তুগালের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বাংলাদেশি নাগরিকদের অকুণ্ঠ সমর্থনে নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের দোয়া আর ভালোবাসা না থাকলে হয়তো এই দুর্গম পথ অতিক্রম করা কখনোই সম্ভব হতো না।
রানা তাসলিম বলেন, তৃতীয় বিশ্বের একটি গরীব দেশের একজন সাধারন মানুষ আমি। ইউরোপের রাজনীতি কিংবা কোন পদ আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্ত ১ লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি ভুখণ্ড ও লাল সবুজের একটি পতাকাকে ইউরোপের রাজনীতিতে প্রকাশ করার জন্য আজকের এই প্রচেষ্টা।
‘বিগত ২৭ বছরে যেখানেই গিয়েছি, যত মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, আমার ভাষা, আমার কৃষ্টি, আমার সংস্কৃতি, আমার পতাকাই ছিল আমার পরিচয়। আমি বহন করেছিলাম একটি জাতির পরিচয়। যতদিন বাঁচবো ততদিন যেন আপনাদের সাথে নিয়ে এই দায়িত্ব পালন করে যেতে পারি, এই কামনা করছি।’রানা তাসলিম উদ্দিন ২০০৯ সাল থেকে পর্তুগাল সোশালিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন এবং তৎকালীন লিসবন সিটি মিউনিসিপালিটি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডঃ আন্তনিয় কোস্টার পক্ষে বাঙালি কমিউনিটিতে কাজ করেন, যিনি বর্তমানে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯১ সালের শেষের দিকে তিনি পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আসেন। তিনি যখন লিসবনে আসেন তখন পর্তুগালে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখা ছিল মাত্র ৬ জন। ১৯৯২ সালের জুন পর্যন্ত এ সংখা ১২ তে উন্নীত হলে পূর্ববর্তী সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি মাত্র ১২ জন বাংলাদেশি নিয়েই প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পর্তুগাল এবং এর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৫ সাল থেকে আজ অবধি রানা তাসলিম উদ্দিন পর্তুগিজ জুডিশিয়াল ট্রাইব্যুনাল, পুলিশ অফিস, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ, এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন, তদন্ত অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড অফিসে দোভাষী হিসেবে কাজ করে আসছেন। দীর্ঘদিন পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রানা তাসলিম উদ্দিন।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা মারটিম মনিজে একটি বড় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার তৈরির জন্য তিনি পর্তুগীজ সরকারের সাথে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করছেন। বর্তমানে এর কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রায় ১০ মিলিয়ন ইউরো খরচ হবে এই কাজে, যার মধ্যে আছে জমির দাম, স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ ও নির্মাণ ব্যায়। সরকারী দল করার সুবাদে সংসদ ও স্থানীয় পৌরসভা থেকে এই অর্থ বরাদ্দ পেতে সুবিধা হয়েছে। এই নির্মাণে স্থপতির ফি বাবদ আড়াই লাখ ইউরো স্থানীয় বাংলাদেশিরা দেবে।রানা তসলিম বলেন, নির্বাচনের পর এই নির্মাণ কাজ শেষ করাই হবে আমার প্রথম টার্গেট। তিনি এরপর একটি বাংলা স্কুল ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।
পর্তুগালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশের জন্য তিনি চ্যানেল আই অনলাইন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।