চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পরী কাহিনী…..

প্রতিদিন আমাদের নানান মানুষের সঙ্গে দেখা হলেও সবার কথা সবসময় মনে থাকে না। তেমনই হুট করে দেখা হওয়া এক পরীর গল্প ফেসবুকে তুলে ধরেছেন শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. নাইমা শারমিন।

ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আজ যার সাথে পরিচয় হল তার নাম বলল ‘এঞ্জেল’ বা বাংলায় পরী। কোথায় পরিচয় হলো তা না হয় উহ্যই থাকুক।

পরী আমার আপনার মতো সমাজের সন্মানিত বা সশ্রদ্ধ কেউ নয়। সাধারণ একটা সুতি সালোয়ার কামিজ পরা, কপালে ফিরোজা রং এর একটা বড় টিপ দেয়া, চুলগুলো তেল দিয়ে টেনে পিছনে নিয়ে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টারত নারীরূপী এক মানুষ।

নারীরূপী বলছি এ কারণে যে আমাদের সমাজ না স্বীকৃতি দেয় এই পরীদের মেয়ে হিসেবে, না ফেলে পুরুষদের কাতারে। হ্যাঁ, পরী একজন হিজরা।

আজ খুব কাছ থেকে দেখলাম একজন পরীকে। যার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট তার বাবা আর ভাইরা তাকে সমাজচ্যুত করেছে। বলছিল মায়ের জন্য কষ্ট হয়, খুব খারাপ লাগছিল তখন এই মানুষটার জন্য।

কাঁদছিল মানুষটি। কারণ বসে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছিল, কিছু খাবে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল, কষ্ট আর আবেগে পরী নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, বলছিল তার কষ্টের কথা।

এরপরে নাইমা শারমিন লিখেছেন, যখন কথা বলছিল তখন তার জ্বর ছিল। জ্বরের কারণ জানতে চাইলে বলল ওর গুরু গতকাল অনেক মেরেছে ওকে। কোমরে ৩ টা লাথি আর চড় থাপ্পর দিয়েছে, এরপর থেকেই জ্বর। মারার কারণ কি প্রশ্নের উত্তরে বলল, কাল ১০০০ টাকা কামাই করে দিতে পারেনি।

রোজ নাকি পরী ও পরীর মতো অনেককে ধানমন্ডি লেক থেকে জনপ্রতি ১০০০ টাকা জমা দিতে হয়, না দিতে পারলে মাইর।

জানলাম তার ভালবাসার মানুষটির কথা। সে নাকি সমাজের সুস্থ একজন মানুষ যে পরীর কাছে যেত চাহিদা পূরণের জন্য। সেই সুস্থ মানুষের নাকি আবার সুস্থ স্বাভাবিক একজন গার্লফ্রেন্ডও ছিল। ভালবাসার মানুষটাকে ধরে রাখার জন্য নাকি পরী তাকে নতুন কাপড় কিনে দিত যেন ছেলেটি সেই কাপড় পরে স্বাভাবিক মানুষটির কাছে যেতে পারে।

কেন টাকা খরচ করত ছেলেটির জন্য? তার উত্তরে মিলল দীর্ঘশ্বাস। বলল, আমার তো আর কেউ নেই, এখন আর সেই ছেলেটিও নেই তার সাথে।

৫ বছরের সম্পর্কের স্মৃতি এখনও কাঁদায় তাকে।

বলছিল একজন মানুষ নাকি তাকে রোজ বাকিতে খাওয়ায় তার দোকান থেকে। সেই মানুষটার কথা বলতে গিয়েও কাঁদল সে।

জানালো তারই সাথে থাকে তার আর এক বোন। কাল যখন অনেক মেরেছিল তখন তার বোনকে জানিয়েছিল তার মৃত্যুর ইচ্ছার কথা। আল্লাহ আছেন তাদের জন্য শুধুমাত্র এই ভরসায় আজ অবধি তাদের বেঁচে থাকা।

সবশেষে তিনি লিখেছেন, অনেকে হয়ত ভাবছেন পরী বানোয়াট কাহিনী বলেছে কিছু টাকা নেয়ার জন্য।

না….পরী আজ মিথ্যা বলেনি। জ্বরাক্রান্ত লাল চোখ জোড়া তার প্রমাণ। কষ্টে দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া লবণাক্ত চোখের পানি, তার সততা চিৎকার করে তার অস্তিত্বেরর জানান দিচ্ছিল।

এত দিন রাস্তায় যেসব পরীর দেখেছি আজকের পরীটা তাদের থেকে ভিন্ন ছিল। হয়ত ভালবাসা মমতা পেয়েছে বলেই পরী আজ ভিন্ন ছিল। বাসায় ফেরার পর থেকে শুধু ভাবছি সত্যিই কি কিছুই করার নেই আমাদের এই পরীদের জন্য? কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না….

তবে উপলব্ধি করলাম পরীরাও কষ্ট পেলে আমাদের মতো কাঁদে। তারাও স্বপ্ন দেখে একটা সংসারের। ভালবাসার একজন মানুষের যার উপস্থিতি তাকে আনন্দিত করবে।