চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উপজেলা নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দুটোই দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে। বিগত উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন হয়নি। আসছে উপজেলা নির্বাচনই প্রথমবারের মত দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। উপজেলা পরিষদে যারা প্রার্থী হবেন তারা খুবই তৃণমূল সম্পৃক্ত। তৃণমূলে রাজনৈতিক দলগুলোতে রয়েছে উপদলীয় সংঘাত।জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দিয়ে এসব উপদলীয় সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করা যেতে পারে।

অনেক এলাকায় একই দলীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে রয়েছে তুমুল বিরোধ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর বিভিন্ন পর্যায় যেমন ভি, জি,ডি ভি,জি,এফ, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা প্রভৃতিতে নাম তালিকাভূক্তি করার ক্ষেত্রেও দেখা যায় সাংসদের পক্ষ হতে ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষ হতে পৃথক পৃথক নাম অন্তর্ভূক্তির তালিকা প্রদান করা হয়। অনেক এলাকায় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মুখ দেখাদখিও বন্ধ।জাতীয় নির্বাচনের আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘোষনা দিয়ে এসব দ্বন্দ্ব মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে।

যেহেতু দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনের রীতি তাই প্রথমে ইউপি নির্বাচন,পরে পৌর নির্বাচন, তারপর উপজেলা নির্বাচন ও সবশেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়া উচিত। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও পৌর নির্বাচনের সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশে যেহেতু ইতোমধ্যে ইউপি নির্বাচন ও পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেছে, তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলো সহ সকলেরই এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করা উচিত। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে দিতে পারে সেরকম আশঙ্কাও নেই। কারণ বিএনপিও দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

সুতরাং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে ফেলে তাহলে উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নাও হতে পারে এরকম চিন্তারও কোন যৌক্তিকতা নেই। তারা যদি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধীতা করত তাহলে বিগত নির্বাচনে তারা অংশ নিত না।অথবা অংশ নিলেও দলীয় প্রতীক ছাড়া অন্য কোন প্রতীকে অংশ নিত।

বাম দল ও জাতীয় পার্টিও এর বিরোধী নয় কারণ তারাও তাদের নিজ নিজ দলীয় প্রতীক নিয়েই এসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সুতরাং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সকল দলের পূর্বপ্রস্তুতি হোক উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সকল রাজনৈতিক দলের গ্রুপিং নিরসনের প্রক্রিয়া চালু করা হোক। স্থাপিত হোক একটি গণতন্ত্র চর্চার সিঁড়ি। সিঁড়ির ভাঙ্গাচোরা মেরামত করা হোক। সিঁড়ি হতে ময়লা, পোকামাকর, আরশোলা, চামচিকা ও মাকরসার জাল অপসারণ করা হোক।

একটা সুস্থ, সুঠাম ও পরিচ্ছন্ন সিঁড়ি স্থাপিত হোক বাংলাদেশের গণতন্ত্রে। ইউপি নির্বাচন ঘোষণা দিলেই যাতে মানুষ বুঝতে পারে অতি নিকটে পৌর নির্বাচন,উপজেলা নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন। ১৬ কোটি জনতার মাঝেই যেনো এ বোধ সঞ্চারিত হয় এরকম একটি আবহ চাই। সেটি এবার হতেই শুরু করার রয়েছে অবারিত সুযোগ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের প্রতি এ বিষয়ে একমত হওয়ার অনুরুধ জানাই।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সর্বোচ্চ স্তর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনারা তার প্রস্তুতি নিন। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটান। আর যারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থী হবে ও মনোনয়ন পাবে তারা কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করতে পারবে না এমন রীতি চালু করুন।

যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থী হবে তাদের উপজেলা পরিষদের দলীয় প্রতীকের পক্ষে কার কেমন অংশগ্রহন ও ভূমিকা তাও যাচাই করুন। এতে গণতন্ত্র চর্চা অনেকাংশেই শৃংখলার দিকে যাত্রা করবে বলে মনে করি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)