জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে এবং তাতে বিনপিকেও আসতে হবে।
আর বিএনপির বক্তব্য, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে সহায়ক সরকার প্রয়োজন হবে। এবিষয়ে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের পরস্পরবিরোধী এই অবস্থান শঙ্কা জাগাচ্ছে।
বুধবার মেট্রোরেল প্রজেক্ট ২, ৪, ৫ এর ‘কন্ট্রাক্ট প্যাকেজের’ চুক্তি স্ই অনুষ্ঠান শেষে সংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়েই বিএনপি ছলচাতুরি করছে।
এদিনেই ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
রাজধানীর তোপখানা সড়কে জাতীয় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আপত্তি তাদের।
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়, টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দলটি।
নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের আজ অভিযোগ করেন, “তাদের (বিএনপি) ভেতরে নির্বাচন ভীতি কাজ করছে। প্রতিবারই নির্বাচনের আগে তারা কথা চালাচালির রাজনীতি শুরু করে। এবারও তাই করছে। ” বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ছলচাতুরি করে করে কোনো লাভ হবে না! শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আপনাদের (বিনপিকে) আসতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় ঘরে তুললেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তা হবে না। তিনি বলেন, “আপনারা রেফারি-লাইন্সম্যানসহ সবাই অত্যন্ত সুন্দরভাবে খেলবেন, গোল দিয়ে যাবেন, আর আমাদের খেলতে দেবেন না- এই খেলা হবে না। এক তরফা খেলা হবে না, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া খেলা হবে না।”
“আপনাদের অধীনে নির্বাচন হওয়া কঠিন, এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। সহায়ক সরকার প্রয়োজন হবে নির্বাচনকালীন সময়ে,” বলেন মির্জা ফখরুল। সেই নির্বাচনকালীন সরকারের গঠন-কাঠামো নিয়ে আলোচনায় বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
“দেশ যখন উন্নয়নে মহাসড়কে হাঁটছে; তখন বিএনপি দেশে আবারো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।” বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্দলীয় সরকারের দাবি এবং নির্বাচন ঠেকাতে ওই সময় বিএনপির আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা হয়। নির্বাচনের দিনেই সহিংসতায় নিহত হন ২২ জন। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার দিক থেকেও সেই নির্বাচন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।
এর পর সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তীর দিন থেকে আবারও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। টানা তিন মাসের এই কর্মসূচিতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়৷
বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে, তার কোন অস্তিত্ব সংবিধানে নেই বলে বুধবার মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা (সরকার) বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান তো আপনি ভেঙে-কেটে-ছুড়ে ছিন্ন-ভিন্ন করে এখন যেটা তৈরি করেছেন, সেটা তো সংবিধান না, আপনারদের মনগড়া একটা কাগজ তৈরি হয়েছে।”
মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না তারা।
আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত বলে সোমবার জানান ওবায়দুল কাদের। এর জবাবে মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল বলেন, সহায়ক সরকার ও নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত থাকলে যেকোন সময় বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, ৩০০ প্রার্থী নয় বিএনপির ৯০০ প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বোঝা যাবে জনগণ তাদের (আওয়ামী লীগ) কোন পর্যায়ে নিয়ে যায়।