একদিন আগে মুমিনুল হক দলে না থাকার খবরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো মিরপুর স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। রোববার একই জায়গায় শীতলতা ছড়িয়ে দিলেন নাসির হোসেন। স্বভাবসুলভ দুষ্টুমি-ঠাট্টা আর উপস্থিত বুদ্ধির দারুণ খেলায় মাতিয়ে রাখলেন পুরো সংবাদ সম্মেলন। ১১ মিনিটের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মনে হচ্ছিল, এতক্ষণ রসিকরাজা গোপাল ভাঁড় কথা বলছিলেন নাকি নাসির কথা বললেন!
নাসিরের দুষ্টুমি শুরু হয় এক সিনিয়র সাংবাদিকের প্রশ্নে। দুই বছর পর টেস্ট দলে ফেরা নাসিরকে আপনি সম্বোধন করে প্রশ্ন করছিলেন তিনি। প্রশ্নের মাঝপথে তাকে থামিয়ে দিয়ে নাসির বলে ওঠেন, ‘আমি তো আপনার ছেলের বয়সী, আপনি আপনি বলছেন কেন!’ সঙ্গে সঙ্গে সংবাদকর্মীরা ফেটে পড়েন প্রাণখোলা হাসিতে। হাসির রোল পড়ে যায় পুরো কক্ষে।
কথাটা বলতে বলতে হেসে ওঠেন নাসির নিজেও। এই রসিকতার পর নাসির আবার হয়ে যান ‘সিরিয়াস টেস্ট ক্রিকেটারের’ মতো। বলতে থাকেন তার টেস্ট দলে ফেরার নানা চ্যালেঞ্জের কথা। জানাতে থাকেন জাতীয় দলে টিকে থাকার জন্য তার পরিকল্পনার কথা।
এর মধ্যেই আবার হাজির হন ‘রসিক নাসির’। এবার এক সংবাদকর্মী বলেন, ‘দুই বছর আগে যখন বাদ পড়েন, তখনকার সঙ্গে এখনকার আপনার মধ্যে পার্থক্য কী?’ এক মুহূর্ত না ভেবেই নাসির বলে ওঠেন, ‘আগে আমার গোঁফ ছিলো না, এখন আছে!’ উপস্থিত বুদ্ধির এমন খেলা সংবাদ সম্মেলনে বহুদিন হয়নি!
দুষ্টুমির পরপর নাসির অবশ্য এই প্রশ্নের ‘সিরিয়াস’ উত্তরটাও দিয়েছেন, ‘পার্থক্য আসলে তেমন কিছু না। বাদ পড়েছি ঠিক আছে। খারাপ খেললে কেউ থাকবে না এটা স্বাভাবিক আবার এটাও সত্য পারফর্ম করলে আবার সে জায়গায় আসবে। বাদ পড়ার পর থেকে আমি চেষ্টা করছি পারফর্ম করতে। কারণ আমার জীবনে অনেক ম্যাচ ছিল যেগুলো আমি চাইলে বড় বড় রান করতে পারতাম; হয়তো কিছুটা ঢিল দেয়ায় তা হয়নি। এখন আমি বুঝি যে, যত বেশি সময় উইকেটে ব্যাটিং করা যায় তত বেশি রানও আসে।’
দুই বছর আগে নাসির যখন দল থেকে বাদ পড়েন, তখন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মতো তরুণরা ছিলেন না। কিন্তু এখন ফিরে এসে তাদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে। নাসির অবশ্য এই কঠিনতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তার সব মনোযোগ বরং পারফর্ম করার দিকে।
‘কঠিন আসলে কোনো কিছুই না আবার সবকিছুই কঠিন। যদি সুযোগ পাই চেষ্টা করবো পারফর্ম করার জন্য। আমার প্রতিযোগিতা কারও সঙ্গেই না। নিজের সঙ্গে। সুযোগ পেলে যদি পারফর্ম করি অবশ্যই দলে আমার জায়গা পাকা হয়ে যাবে।’
নাসিরের প্রতি ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্যরকম এক ভালবাসা কাজ করে সবসময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় তার নমুনা। নাসির দলে থাকলে যেমন উচ্ছ্বাস থাকে না থাকলে থাকে তেমন হতাশা। সংবাদ মাধ্যমেও দেখা যায় নাসিরকে নিয়ে নিউজের ছড়াছড়ি। এ ব্যাপারটি নিয়েও শুরুতে রসিকতা করেন নাসির, আমি খেললেও নিউজে থাকি, না খেললেও নিউজে থাকি।’ পরক্ষণেই অবশ্য বলেছেন ভক্তদের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার কথা, আমাকে নিয়ে এত কথা হওয়ার ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটো দিকই আছে। পারফর্ম না করলে ব্যাপারগুলো খারাপভাবে সামনে আসবে। তবে আমাকে যারা ভালবাসে তাদের জন্য ভালো খেলা উপহার দিতে চাই।‘
সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। টিভি ক্যামেরার বুমের পাশে নাসিরের কথা রেকর্ড করার জন্য রাখা সংবাদকর্মীদের অসংখ্য মোবাইল। উঠে যাওয়ার সময় মোবাইলগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার রসিকতা, ‘সব কম দামি ফোন, একটাও দামি ফোন নেই যে নিয়ে যাব!’