আশা জাগানিয়া একটা খবর পাওয়া গেলো। ঢাকার একটি স্কুলের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের মামলায় ৬০ বছরের বৃদ্ধ মোহাম্মদ সেলিমকে ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর মুগদার ওই হাইস্কুলের গেটে স্কুল ছুটির সময় অভিভাবকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতো মোহাম্মদ সেলিম। তার কোন আত্মীয় ওই স্কুলে পড়তো না। বয়স্ক মানুষ বলে কারো তেমন কোন সন্দেহও হতো না। এ সুযোগটাই সে নিয়েছে। ছুটির সময় স্কুলের গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে সুযোগ বুঝে ছাত্রীদের শরীরে হাত দিতো সে। সমাজের আনাচে কানাচে এরকম সেলিমরা লুকিয়ে থাকে। মার্কেট, শপিং মল, বাস-ট্রেনের ভিড়ের মধ্যে এদের হাত নিশপিশ করে। সবসময় নারী শরীরের খোঁজে থাকে সেলিমদের হাত। এ ধরনের নির্যাতনের ভয়ে নারীরা অনেকেই পাবলিক প্লেসে যেতে ভয় পান। লেখাপড়া বা কাজের জন্য পাবলিক প্লেসে গেলে বা গণপরিবহনে উঠলে নারীদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সবসময় সতর্ক রাখতে হয়। মনের ভেতরে জড়সড় হয়ে চলতে চলতে আশঙ্কা করে, কোন ছলে কখন না কোন বিকৃত রুচির পুরুষ তাকে স্পর্শ করতে চায়। এসব ঘটনায় খুব কম ক্ষেত্রেই নারীদের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। কারণ বিকৃত রুচির পুরুষরা সংঘবদ্ধ থাকে। প্রতিবাদী নারী দেখলে তাদের পুরুষত্বের অহমে লাগে, পুরুষত্ব জেগে উঠে। অনেকসময় দেখা যায়, একজন বিকৃত রুচির পুরুষ প্রতিবাদের মুখোমুখি হলে অন্য পুরুষরা সংঘবদ্ধ হয়ে নারীকে পাল্টা আক্রমণ করে। কোন পুরুষ ওই নারীর পক্ষ নিয়ে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ালে তাকেও হেনস্তার শিকার হতে হয়। এ কারণে মনের ভেতরে ইচ্ছা থাকলেও নির্যাতকবিরোধী পুরুষরা উচ্চকণ্ঠ হয় না। এ সুযোগে ভণ্ড পুরুষদল প্রতিবাদকারী নারীকে ‘খারাপ মেয়ে’ বলে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগে। অনেক সময় নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটে। এমন সামাজিক পরিস্থিতিতেও প্রতিবাদী হয়েছে মুগদার ওই স্কুলের ছাত্রীরা। ছাত্রীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সেলিমকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌস ইসলাম মামলা দায়ের করেন। বিচারের সময় প্রধান শিক্ষিকা এবং ছাত্রীরা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এভাবে আদালতে উপস্থিত হওয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে প্রমাণের অভাবে সেলিম রক্ষা পেয়ে যেতো। এ মামলার রায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মেয়েদের প্রতিবাদী হওয়া, নির্যাতক পুরুষকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেওয়া এবং পরে বিচারের সময় সাক্ষ্য দিতে যাওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নিজেদের চলাফেরা নিশ্চিত করতে সমাজের সব নারীকে এরকম সচেতন হতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। বিকৃত রুচির পুরুষদের প্রতিরোধ করতে হবে। সচেতন পুরুষদেরও উচিত নারীদের সাহস যোগানো এবং প্রতিবাদের সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আদালতের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই: এ ধরনের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত হওয়া উচিত। কারণ, সামাজিক অপরাধের শাস্তি হলে অপরাধ কমবে।