চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নারীর ওপর ‘অদৃশ্য’ কাজের বোঝা বেশি

ডিম, দুধ, আলু, পটল, চাল, ডাল…এমনকি বাথরুমের সাবান বা টয়লেট টিস্যু- কোনটা কতটুকু আছে, কোনটা শেষ হওয়ার পথে আর কোনটার এবারের সদাইটা ভালো হয়নি, হাত মোছার তোয়ালেটা কখন ময়লা হলো, এর সবকিছুরই খেয়াল রাখার দায় যেন একমাত্র গৃহকর্ত্রীর।

গৃহিনী হলে তো কথাই নেই, ফুলটাইম কর্মজীবী নারীরাও সারাদিন বাইরের কাজ শেষে বাসায় ফিরে সংসারের সিংহভাগ সামলান। অনেকেই একে বলেন ‘সেকেন্ড শিফট’ বা কাজের দ্বিতীয়ার্ধ।

কিন্তু শুধু যে দৃশ্যমান কাজ করা নারীর দায়িত্ব তা নয়। সংসারের সবকিছুর খেয়াল রাখা আর সেগুলো নিয়ে চিন্তা করাও তারই কাজ। আর এই ‘অদৃশ্য’ কাজ নারীর ওপর অতিরিক্ত একটা চাপ হিসেবে সবসময়ই কাজ করে, যা সাধারণত সংসারের পুরুষটির ওপর কখনোই থাকে না।

সমাজবিদ সুজান ওয়ালজার ১৯৯৬ সালে ‘থিংকিং অ্যাবাউট দ্য বেবি’ শিরোনামে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে সমাজে নারী-পুরুষের মাঝে অদৃশ্য কাজের এই বিভেদটাকে তুলে ধরা হয়েছে। ওই গবেষণার জন্য ওয়ালজার ২৩ দম্পতির সাক্ষাৎকার নেন।

এই দম্পতিদের বাছাই করার পদ্ধতিটাও ছিল অদ্ভুত। আগের বছরের কোনো এক সময় সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন – এমন মানুষদের পত্রিকায় দেয়া ঘোষণা পড়ে পড়ে ওয়ালজার তাদের নির্বাচন করেন। গবেষণায় দেখা যায়, নারীরাই শিশুপালন এবং ঘর সামলানোর বেশিরভাগ বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক এবং আবেগীয় কাজগুলো করেন। তথ্য জানা এবং শেখার কাজটাও তারা করেন পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি।

সংসারের দুশ্চিন্তাগুলো নারীদেরই বেশি করতে হয়। যেমন, তার সন্তান ঠিকঠাক এগিয়ে যেতে পারছে কিনা। একই সঙ্গে গোছগাছ এবং দায়িত্ব বণ্টনের কাজটাও তারাই করেন বেশি।

এমনকি যখন তাদের পুরুষ সঙ্গীরা তাদের কাজে যথেষ্ট পরিমাণে ‘সাহায্য’ করছেন, তখনো কিন্তু সেই নারীকেই খুঁজে বের করতে হচ্ছে আসলে কী কী কাজ করতে হবে।

বর্তমানেও কিন্তু এর থেকে অবস্থা কিছু ভিন্ন নয়। সংসারে ছেলেরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে সাহায্য করে। ঘরে-বাইরে মিলিয়ে এখন নারী ও পুরুষের অর্থের বিনিময়ে এবং অর্থ ছাড়া কাজের পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু বাহ্যিক কাজের পরিমাণ হিসেব করলেও মানসিক কাজের যে চাপ, তার হিসেবে নারীরা অনেক বেশিই এগিয়ে।

তবে নারীরা একদিকে সহজাতভাবে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী এবং সামাজিকভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানসিক চাপ নিয়ে আসছে বলেই এখনো প্রচলনটি চলে আসছে বলে মনে করেন গবেষকরা। সংসারে যদি হুট করে দায়িত্বশীল নারী কোনো কারণে খেয়াল রাখার দায়িত্বটা না নেন বা নিতে না পারেন, তবে পুরুষেরাই একটু একটু করে খুঁটিনাটি খেয়াল রাখতে শুরু করবেন বলে মনে করেন তারা।