নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ খুন মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলর নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আসামী নূর হোসেনের দ্বন্দের জের ধরে সাত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। শুধু নজরুল টার্গেট থাকলেও নিরীহ আরো ৬ জন মানুষ খুন হয়েছেন।
রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা আজ আদালতে প্রেস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন এই তথ্য জানান।
রায়ের পর্যবক্ষেণে আদালত আরো বলেছেন, এটি একটি শৃঙ্খলিত বাহিনীর কিছু সংখ্যক দুস্কৃতিকারী ও কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত। এখানে নূর হোসেন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গডফাদার। অপর একজন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুই জনের দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। একজন প্যানেল মেয়র নজরুলকে হত্যা করতে গিয়ে নিরীহ আরো ৬ জন মানুষ এই সকল র্যাব ও নূর হোসেন বাহিনীর দ্বারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে।
আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন র্যাব প্রসঙ্গে বলেন, র্যাব একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী। এই বাহিনীর অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি আছে দেশে। সন্ত্রাস বিরোধীতা থেকে শুরু করে জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অর্জন রয়েছে এই বাহিনীর। কিন্তু এদের যে কয়েকজন ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন-এই সমস্ত দায় দায়িত্ব তাদের। তারা উচ্চ বিলাসিতার জায়গা থেকে ঘৃণ্যতম অপরাধটি সংঘটিত করেছেন। তাতে র্যাবের মান সম্মান ক্ষুণ্ন হলেও সার্বিকভাবে র্যাব বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়নি। র্যাব আমাদের জাতির একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী, তাদের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে র্যাবকে প্রশংসাও করেছেন। আবার তিরস্কার দিয়েছেন, যাতে করে ভবিষ্যতে র্যাব বাহিনী এই ধরনের উচ্চাভিলাষী, ঘৃণ্যতম অপরাধের সাথে যুক্ত হতে না পারে-সেজন্য র্যাব বাহিনীতে নিয়োগ দেয়ার আগে সর্তক থাকার পরার্মশ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পিপি জানান, ৭ খুনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময় যে অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও অপহরণের ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে ১০ বছর এবং আলামত নষ্ট ও ধ্বংস করার চেষ্টার অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, দুটি মামলার রায় হলেও তারা সাজা ভোগ করবেন এক সাথে। একইদিন থেকে সাজার দিন গণনা শুরু হবে। যারা পলাতক আছেন তারা গ্রেপ্তারের দিন থেকে অথবা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করলে সেদিন থেকে তার সাজা গণনা শুরু হবে।