নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এক শিক্ষিকাকে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে পুলিশের দাখিল করার তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে লাঞ্ছিত ও আলোচিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত শুনানী শেষে এই আদেশ দেন। এসময় আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত শ্যামল কান্তি ভক্ত। ন্যায়বিচার পাননি জানিয়ে ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো নাটক বলে দাবি করেন তিনি।
মামলার বরাত দিয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ২০১৪ সালে বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইংরেজী শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেয়ার জন্য তার কাছ থেকে দুই দফায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। শিক্ষিকা মোর্শেদা বেগমকে এমপিওভুক্ত করার কোন উদ্যোগ নেননি।
এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) হারুন অর রশিদ শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির চারটি ধারায় (১৬১/৪১৭/৪০৬/৪২০) অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তবে শ্যামল কান্তি ভক্তের দাবি, তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উচ্চ আদালতে চলমান মামলা থেকে সড়ে দাঁড়ানোর জন্য তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তার আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান।
গত বছরের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যানদীতে পিয়ার সাত্তার লফিত উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় অবমাননার কটুক্তির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে কান ধরে উঠ বস করানোর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত বছরের ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থী রিফাতকে মারধর ও শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে পৃথক তিনজন বাদী নারায়ণগঞ্জ আদালতে তিনটি মামলার আবেদন করেন। আদালত ওই দিন বিকেলে শুনানি শেষে প্রথম দুটি মামলা খারিজ করে দেন।
পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় হাইকোটের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি সাংসদ সেলিম ওসমান ও অপু প্রধানকে দায়ী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত ২২ মে এই মামলায় সাংসদ সেলিম ওসমান জামিন লাভ করেন।