দুপুরে ঝুম বৃষ্টির পর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আড্ডাটা সবে জমে উঠতে শুরু করেছে। বৃষ্টিভেজা সবুজ ছোট মাঠটায় বুধবার বসার উপায় ছিলো না। অথচ এই মাঠেই বেশ বড়সড় রকমের জটলা দেখে এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো চলছে তুমুল লড়াই।
একেবারে ডব্লিউডব্লিউ ই’র মতো রেসলিং হচ্ছে! দারুণ আক্রমণে রুস্তমকে কুপোকাত করে দিলো সুলতান। একটু পরই দড়ি দিয়ে ঘেরাও করা লড়াই মঞ্চে এলো বাহুবলী ও কাটাপ্পা। বেশ কিছুক্ষণ চললো তাদের লড়াই। লম্বা পায়ের লাথিতে তরুণ বাহুবলীর কাছে অভিজ্ঞ কাটাপ্পাকে পরাজয় স্বীকার করতেই হলো।
রুস্তম, সুলতান, বাহুবলী, কাটাপ্পারা আসলে আছিল জাতের লড়াকু মোড়গ, মোড়গ মালিকরাই শখ করে রেখেছেন এসব নাম। ঢাকের বাজনার সঙ্গে মোড়গ লড়াইয়ের এই দৃশ্য যেনো ধূসর শহর থেকে মনকে টেনে নিয়ে গেলো আবহমান বাংলার শেকড়ে।
শহুরে হাসি-তামাশা, মৌজ-মাস্তির ফাঁকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর শেকড়ে ফেরার টান থেকেই লোকজ সংস্কৃতির এই ভিন্নধর্মী আসর।
আসরটির অন্যতম আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুনওয়ার বলেন, ‘টিএসসিতে মোড়গ লড়াই, পুঁথিপাঠের এমন আয়োজন এর আগে আমার জানামতে হয়নি। আমরা এখন বৈশ্বিক অনেক কিছু খুব সহজেই জানতে পারছি, হাতের মুঠোয় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের এইসব লোকজ সংস্কৃতি যা আমাদের শেকড় সেসব তো হারালে চলবে না। শহুরে আবেশেই মাটির টান, শেকড়ে ফেরার টান থেকেই আমাদের এই আয়োজন।’
‘মজমা’ নামের এই আসরে মোড়গ লড়াই পর্বের পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে শুরু হয় পুঁথি পাঠ। টিএসসির গেমস রুমের ভেতরটা যেনো এক গ্রাম্য উঠান। ছনের ছাউনি দেয়া বারান্দায় হারিকেনের আলো-আধাঁরিতে মৈমনসিংহ গীতিকার ‘চন্দ্রাবতী’ পাঠের সঙ্গে ধীর লয়ে বাজতে থাকে লোকজ বাদ্যযন্ত্র।
সর্বশেষ আয়োজন ছিলো বাঁশি,দোতারার সঙ্গে লোক সংগীত। চেনা লোকগানে গলা মিলিয়ে শ্রোতারাও জানান দেন মাটির টান আছে অন্তরে।
ভিডিওতে দেখুন রুস্তম বনাম সুলতান, বাহুবলী বনাম কাটাপ্পার লড়াই:
ছবি ও ভিডিও:ওবায়দুল হক তুহিন