চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

দ্রোহের কবি প্রেমের কবি আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস

বল বীর চির উন্নত মম শির- কেবলমাত্র এই একটি বাক্যেই অমর হয়ে আছেন কাজী নজরুল ইসলাম। মানুষের সার্বজনীন বিদ্রোহী সত্বাকে লালন করে মানবতার জয়গান গেয়েছেন এই কবি। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি মননে কবি কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে তার প্রস্থান। তিনি লেখাতে যেমন দ্রোহ ও মানবতার গান গেয়েছেন তেমনই জীবনে ও কর্মেও ছিলেন এক মানবতাবাদী বিদ্রোহী। তার সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল প্রবল, ছিল মানবতার প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য। পরাধীন অবহেলিত ভারতবাসীর সাথে ছিলো তার হৃদয়ের টান। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় বিভেদের বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন উচ্চকিত। বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছেন। তিনি প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং সুরারোপ করেছেন। লেখক জীবন ছোট, তাতেই বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। ১৯০৮ সালে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয়। সমাজের অন্যায় অবিচার সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল অনাচারের বিরুদ্ধে তার কলম ছিলো সর্বদা সোচ্চার। তিনি শুধু লিখেই সংগ্রাম করেননি, প্রত্যক্ষভাবে রাজপথেও নেমেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। বহু আগেই তিনি বাংলার হিন্দু মুসলিমদের ঐক্যের কথা বলে গিয়েছিলেন একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণের প্রথম শর্ত হিসেবে। তাঁর কবিতা তাঁর গান বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অমূল্য প্রেরণা হিসেবে এদেশের মুক্তিপ্রাণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আজও আমরা সমাজের নানা বিভেদ বৈষম্য দেখে নজরুলের কাছেই ফিরে যাই। কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শ ও চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। আজ আমাদের সমাজ জীবনে যে অন্যায়-অনাচার চলছে তার থেকে পরিত্রাণের উপায় তাঁকে ধারণ করা। তাঁর চেতনা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় হোক আমাদের জাতীয় জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্য।

ছবি অলংকরণ: উত্তম সেন