চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দেশ কি আসলে বিক্রি করা যায়!

দেশে বায়বীয় শব্দ এত বেশি উচ্চারিত হচ্ছে যে, মাঝে মাঝে মনে হয় ভাসছি। ভাসছি বাতাসে।

‘ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করা হয়েছে।’ আবার শুনি ‘আরও পাঁচ বছর ক্ষমতার জন্য সরকার ভারতের সঙ্গে নানা চুক্তি করেছে।’ বাক্য দুটি শুনে প্রশ্ন জাগছে আমরা কি এখন বাংলাদেশি নাকি ভারতীয়?

যদি ওই বাক্য দুটি বায়বীয় না হয় তা হলে তো আমরা এখন আর বাংলাদেশি নই। আমরা ভারতীয়। আহারে কি আনন্দ! ভারতে যেতে আমাদের আর লাইন ধরে ভিসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারকে ধন্যবাদ। কত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় ভারতে যেতে।

এখন আর কেউ বলবে না, ছিঃ তুমি ভারতীয় কুটনামি চ্যানেল দেখ। ভাবি ননদ আর শাশুড়ির ঝগড়াঝাটি দেখে কি মজা পাও? ভারতীয় চ্যানেল দেখে কুটনামি শিখছো।

সবচেয়ে ভাল লাগছে এটা ভেবে যে, আমাদের এখন ক্রিকেটে কেউ ঠকাতে পারবে না। জোর করে হারাতেও পারবে না। কারণ আমরা সবাই এখন ‘দাদাভাই’। আমাদের রয়েছে মাশরাফি-সাকিব-ধোনী। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের কাছে এখন তুচ্ছ।

আমাদের বোন ফেলানিকে মেরে আর কোন বিএসএফ জওয়ান কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখবে না। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ আমাদের কোনো নাগরিককে ধরে নিয়ে যাবে না। কারণ আমরা এখন একদেশের নাগরিক। আমরা এখন বিক্রি হয়ে গেছি ভারতের কাছে।

কিন্তু সমস্যা হল বিক্রি হয়ে যাওয়া দাসের মত আমাদের সাথে যদি আচরণ শুরু করে ওরা! আমাদের ছবি এখন দাদারাও দেখতে বাধ্য। শুধু একতরফাভাবে ওদের চ্যানেল আমরা আর দেখব না। আমাদের নাটক দেখে ওরা ভাল নাটক টেলিফিল্ম বানানো শিখবে। আহ কি মজা!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। দেশটা বিক্রি করে এসেছেন আপনি। নইলে কি আর এত সুযোগ পেতাম?

আমরা আর তিস্তার পানি নিয়ে কথা বলব না। কারণ ওটা এখন আমাদেরই। তোর্সার পানিও আমাদের। ছিটমহলবাসী বোধহয় অবাক হয়েই গেল, খানিকটা হতাশও। কারণ তারা আগের মতই হয়ে গেলেন।

আমাদের এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যদেশের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে না। চেন্নাই তো আমাদেরই দেশের অংশ। টাকা-কড়ি বেশি খরচ হবে না। ওরা তো আমাদের চিকিৎসাতুতু ভাই, না ভুল বললাম, দাদা।

আমাদের লেখক বলতে আর শুধু সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের নন, যোগ হবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, জয় গোস্বামী, আবুল বাশারও। সমবন্টণ হবে আমাদের বইয়ের বাণিজ্যিকীকরণ রীতি।

আমাদের সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লার পাশাপাশি উচ্চারিত হবে আশা ভোশলে, লতা মুঙ্গেশকারের নাম। আহারে কি আনন্দ! নচিকেতা, সুমন এখন আমাদের। আমরা এখন ভারতীয়। আমরা বিক্রি হয়ে গেছি ভারতীয়দের কাছে। শেখের বেটিকে ধন্যবাদ না জানালে পরকালেও শান্তি পাওয়া যাবে না।
আমাদের ওপর একাত্তরে যে অত্যাচার চালিয়েছিল পাকিস্তানীরা সে কথা এখনও মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। এখন আসুক ওরা। একদম উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। আমরা দুই দেশ এখন এক। পাকিস্তানীদের মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলব।
আমরা এখন সামরিকভাবে অনেক শক্তিশালী। আমাদেরকে হিসেব করে চলতে হবে বিশ্বের অনেক দেশকে। কেউ আর এখন তলাবিহীন ঝুড়ি বলতে পারবে না।

স্বপ্নে এতক্ষণ কত কিছুই না ভাবছিলাম। মিছে অলীক স্বপ্ন দেখতে চাই না।

আমাদের দেশের কোন শ্রেণীর মানুষ এসব বায়বীয় কথা বলছেন। ভাবলে অবাক লাগে। একটা দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী যখন এসব বায়বীয় কথা বলেন তখন বুঝতে বাকি থাকে না সেই দলটির অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। বায়বীয় কথার দিন শেষ। মানুষ এখন অনেক সচেতন। মানুষ বোঝে তিস্তার পানি পেতে কত জল ঢেলে ঢেলে শেষ করতে হবে বাংলাদেশকে। কত কিছু ত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তো নিজেইে বলেছেন, পানি চেয়ে বিদ্যুৎ পেয়েছি। এ কথার অর্থ বুঝতে হবে।

আর বিরোধী দলীয় নেত্রীর ওই বায়বীয় কথার মানেও জনগনণ বোঝে। শুধু বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা এক জিনিস। আর যুক্তিসংগত বিষয়টা অন্য জিনিস। আপনার যা মনে এল বলে দিলেন, মিডিয়া সেটা প্রকাশ করে দিলেই জনসচেতনতা বাড়ে না। মানুষকে সঠিক যুক্তিটা দেখিয়ে কথা বলেন। মানুষ বুঝবে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা।

কথায় কথায় দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে সরকার, এসব বায়বীয় কথা পরিত্যাগ করে মানুষের মনের কথাটা বলেন, যেটা গ্রহণযোগ্য হবে। ভারত আমাদের বন্ধু হোক আর যা হোক, তারা যে তাদের স্বার্থের বাইরে এক পা এগিয়ে আসবে না সেটা যুক্তি দেখিয়ে ইতিহাস ঘেঁটে জনগনকে বোঝান।

কথায় ওইসব বায়বীয় কথা না বলাই ভাল। এতে দেশের মঙ্গল হবে। কারণ আপনার ওই কথা পক্ষান্তরে ভারতকে অহংকারী করে দেওয়া হয়। তারা আরও দাদাগিরি দেখানোর সুযোগ পেয়ে যাবে ওসব কথায়।

আমরা যে যে দলের হই না কেন, কথা বলার আগে ভাবা দরকার কে আমি? কি বলব আমি? কি বলব না। কোনটা বললে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কোন কথা বললে হাসির পাত্র হতে হবে। সেটা বুঝে বলা দরকার। কারণ আপনার কথার মূল্য আছে। জনগণ আপনার কথার সঙ্গে নিজের চিন্তাকে মিলাবে। কখনো আবার আপনার কথায় প্রভাবিত হবে। আর যারা বুঝবে আপনার কথা মূল্যহীন তখন আপনাকে কিভাবে মূল্যায়িত করবে?

বায়বীয় কথা বলা থেকে দূরে থাকি। দেশের মঙ্গলের কথা সবাই যেন ভাবি। আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি এ বাংলাদেশ। লাখো শহীদের রক্তে কেনা এই দেশ বিক্রির জন্য স্বাধীন করিনি। দেশ বিক্রির অলীক ভাবনা দূর হোক।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)