চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘দেশে মানুষের সংখ্যা অনুপাতে আত্মিক বাঙালির সংখ্যা কম’

জাতিগতগভাবে বাঙালি শিক্ষা, নারী প্রগতি, রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা, পররাষ্ট্রনীতিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেক ক্ষেত্রে আগের তুলনায় এগিয়ে গেলেও সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদ রুখতে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যকে আরো বেশি করে গণমানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকে ভূষিত প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।

তিনি মনে করেন, বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির পাল্টা আকাশ সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির বদলে বিদেশী সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে না পারে সেজন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংস্কৃতিপ্রেমীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যার অনুপাতে আত্মিকভাবে বাঙালির সংখ্যা কম বলেও তিনি মনে করেন। তার মতে, জাতিগত-ভাষাগত দিক কিংবা রাজনৈতিক কোনো দিক থেকেই প্রকৃত বাঙালি সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। এ কারণে সবক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়তাবাদ বিস্তৃত হচ্ছে।

একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের যতোটা আন্তরিক হওয়া দরকার তাদের মধ্যে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটা খুবই দু:খজনক।’

বাইরের সংস্কৃতি বিশেষ করে আকাশ সংস্কৃতি গ্রহণে আমরা কি বেশি উদার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না আকাশ সংস্কৃতি আমরা গ্রহণ করছি। তাই এখানে উদারতার প্রশ্নই আসে না। বরং আকাশ সংস্কৃতি গ্রহণ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। আকাশ সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকায় তারা জোর করে আমাদের ওপর ভিনদেশী এই সংস্কৃতি চাপিয়ে দিচ্ছেন।’

তবে প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী আকাশ সংস্কৃতির সবকিছু বর্জনীয় বলেও মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘অন্য সংস্কৃতির যেসব দিক ভালো, সেগুলো গ্রহণে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি ও সামগ্রিক মূল্যবোধের বিরোধী খারাপ দিকগুলো বর্জন করে কঠোরভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।’

তিনি মনে করেন, ভাষা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ নিজস্ব সংস্কৃতিকে গণমানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচার ও প্রসার না থাকায় উগ্র জাতীয়তাবাদীরা সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। এছাড়া অনেক রাজেনৈতিক দল ও বিভিন্ন সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতাও উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রবণতার জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন। এই দূরত্বের কারণেই বাংলাদেশের মানুষের অনুপাতের চেয়ে মনন ও মানসিকতায় প্রকৃত বাঙালির সংখ্যা অনেক কম বলে মনে করেন।

উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিকাশে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কামাল লোহানী।