২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের একটি ধারা নিয়ে মরা ছাগলের প্রসঙ্গ টেনে ‘মনগড়া’ বক্তব্য দিয়ে মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যদিও সচিব দাবি করেছেন, তার বক্তব্য সঠিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। বরং মরা ছাগল ও প্রাণি বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন বলেও জানান সচিব মো. শাহ কামাল।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা কমিটির এক সভায় সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি উঠলে এতে সচিব বিরক্ত হন। সাংবাদিকদের কোন ‘জ্ঞান’ নেই উল্লেখ করে আইনের ২২ ধারা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জকে যারা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাদের কোন জ্ঞানই নেই। কিসের দুর্গত এলাকা? একটি ছাগলও তো মারা যায়নি। খাদ্যগুদামে প্রচুর খাদ্য মজুদ আছে।
‘কোন এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে ওই এলাকার অর্ধেক মানুষকে মরতে হয়’ এমন বক্তব্য বিষয়ে জানতে চেয়ে চ্যানেল আই অনলাইনএর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বলেন: আমি এমন কোনো বক্তব্য দেই নি। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
ওই মিটিংয়ে মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন: আমার মন্ত্রী বলেছেন যে, সেখানে গরু ছাগল বা কোনো প্রাণীই মারা যায়নি। তাই সেখানখার অবস্থা ততোটা খারাপ নয়, যতোটা দাবি করা হচ্ছে। আমিও ঠিক এ কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পুরো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি।
কোন এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে ওই এলাকার অর্ধেক মানুষকে মরতে হয় এমন কোন তথ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের কোন ধারায় বলা নেই। যা সচিবের একান্ত ‘মনগড়া’ তথ্য। বৃহস্পতিবার সচিবের এই বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিলেট টুডে টোয়েন্টিফোরডটকম।
দুর্যোগ আইনের ২২ ধারায় মোট চারটি উপধারা রয়েছে। যার এক উপধারায় দুর্গত এলাকা ঘোষণা বিষেয়ে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রপতি, নিজের বিবেচনায় বা উপ-ধারা (৩) এর সাথে মিলে গেলে, যদি এমনটি মনে করেন যে, দেশের কোন অঞ্চলে দুর্যোগের কোন ঘটনা ঘটেছে যা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অধিকতর ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয় রোধে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করা জরুরি ও আবশ্যক, তা হলে সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করতে পারবেন।
দুই উপধারায় বলা আছে, ‘কোন অঞ্চলে মারাত্মক ধরণের কোন দুর্যোগ দেখা দিলে তা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণসহ ওই দুর্যোগের অধিকতর ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয় রোধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি ও দরকার হলে স্থানীয় পর্যায়ের কোন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, গ্রুপ বা সংস্থা দ্রুত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন।
বাকি দুটো উপধারাতেও সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোন তথ্য নেই।
গত মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ওই সচিব সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবির আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেন এবং আইনের ধারা নিয়ে মনগড়া বক্তব্য দেন। এরপর সেখানে উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া আসে। সেইসাথে ফসলহার কৃষকের পক্ষে আন্দোলনকারীদের নিয়ে সচিবের এমন কটূক্তির প্রতিবাদে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরা সভা থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর থেকে সচিবের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো সুনামগঞ্জ জেলা। ওই একই সভার প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: প্রশাসনের শীর্ষ পদে থেকে হাওর অঞ্চলের দুর্যোগ নিয়ে এমন বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ হাওর অঞ্চলের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল নয়। আমরা অবিলম্বে এই বক্তব্যে প্রত্যাহার চাই।
‘ফসল হারিয়ে সুনামগঞ্জের সাধারণ কৃষকরা বিপর্যস্ত। আর এ সংকট মোকাবেলায় প্রশাসনকে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। স্বল্প মূল্যে চাল সরবরাহ করতে হবে।’ দুর্বল বাঁধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।