চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

দিনাজপুরের বয়লার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি: দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর ভাবনীপুর ও আশেপাশের গ্রামগুলোতে চলছে শোকের মাতম। শেষ নেই আহাজারি’র। প্রতিদিন কোনো না কোনো বাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুলখানী। পাশাপাশি চলছে দাফনকাজও।

দিনাজপুরে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে এ (বুধবার) পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের মৃত্যু’র সংখ্যা।

সর্বশেষ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এনামুল হক মারা যান। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় মারা যান মাজেদুল ইসলাম।

সোমবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনোরঞ্জন রায়ের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৫ জনে।

এর আগে ১৯ এপ্রিল বিকেল ৫টায় অঞ্জনা দেবী নামে এক নারীসহ ওই দিন রাত ৮টার দিকে মোকছেদ আলী, ২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আরিফুল হক এবং ২২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় রুস্তম আলীর মৃত্যু হয়।

পরে ওই দিন অটোমেটিক রাইস মিলের ম্যানেজার রনজিৎ বসাক এবং দেলোয়ার হোসেনকে শনিবার সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ১টার দিকে রনজিৎ এবং শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে দেলোয়ার মারা যান।

এছাড়াও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোরে শফিকুল ইসলাম, রোববার দুপুর ১২টার দিকে উদয় চন্দ্র, ২টার দিকে দুলাল চন্দ্র, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুকুল ও সাড়ে ৭টার দিকে মুন্না রমেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং সাড়ে ৬ টায় দিনাজপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা  রিপন নামের ১জন যান।

নিহতদের মধ্যে মোকছেদ, রুস্তম ও দেলোয়ার আপন ভাই। তাদের আরেক ভাই বাদলও দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ওই চার ভাই দিনাজপুরের ভবানীপুর গ্রামের জহির উদ্দীনের ছেলে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।

১৯ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনাজপুরের সদর উপজেলায় গোপালগঞ্জের শেখহাটিস্থ যমুনা অটোমেটিক রাইস মিলের বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ২৮ জন শ্রমিক আহত হন।

বুধবার বিকেলে সরেজমিনে সদর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃত্যুবরণ করছে এমন পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যত নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে তাদের স্বজনরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নির্বাক তারা। এখনো বেঁচে থাকা মানুষগুলোর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি স্বজনদের।

মারা যাওয়া রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম হোসেন জানান, তাদের সম্পূর্ণ পরিবারটিই তার বাবার ওপর নির্ভর ছিল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন তারা। পাশাপাশি পরিবারের অতি আপনজনকে হারানোর শোক কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না তারা। একই অবস্থা মকছেদ আলীসহ অন্যন্য নিহত পরিবারের।

নিহত মোকছেদ আলীর ছেলে মতিউর রহমান জানান, ক্ষতিপুরন বা সাহয্য তো দুরের কথা-তাদের শোকাহত পরিবারের একবার খবরও নেননি মিল মালিক।

আহত শহীদুলের স্ত্রী পারভীন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার স্বামী শ্রমিক হওয়ায় ন্যুনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি মিল মালিক।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানিয়েছেন, হতাহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনা তদন্তে কাজ করছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।