চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ত্রাণ পেয়ে খুশি হলেও মিয়ানমারে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে দেড়শ পরিবারের হাতে মালয়েশিয়ার ত্রাণ পৌঁছেছে । এসব ত্রাণ পেয়ে খুশি হলেও রোহিঙ্গাদের দাবি একটাই, তারা যেন নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে। সে জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

বুধবার বেলা ১১টায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ গ্রহণের সময় রোহিঙ্গারা এমন আকুতি জানান। মালেশিয়ার প্রতিনিধি দল উপস্থিত হবার পর ৫০ টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন মালেয়শিয়ান সাংসদ আবদুল আজিজ বিন আব্দুর রহিম। এর পর উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে ৫০ পরিবার ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে ৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।

ত্রাণ নিতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলেন, মিয়ানমারে আমাদের অনেক সম্পদ আছে। আমরা নিজেরাই ত্রাণ দিতে পারেবো।  আমরা ত্রাণ চাইনা,আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই। নিরাপদ ভাবে বসবাসের প্রতিশ্রুতি চাই। ত্রাণের পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যেন মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা হয় এমন দাবি জানান তারা।

ত্রাণ বিতরণ সমন্বয় কমিটির প্রধান ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, বুধবার প্রাথমিকভাবে দেড়শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ত্রাণ পাবে রোহিঙ্গাদের ১৫ হাজার পরিবার। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার টেকনাফে এবং সাড়ে ৯ হাজার পরিবার উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি আরো জানান,  আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, কফি, চিনি, খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, কম্বল ও চিকিৎসাসামগ্রী সহ প্রায় ৩৫ প্রকার পণ্য।

ত্রাণ বিতরণকালে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, আগামি ২/৩ দিনের মধ্যে পুরোদমে বিতরণের কাজ শুরু করা হবে। এর আগে তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

ত্রাণ নিতে আসা কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আয়েশা খাতুন জানান, মিয়ানমারের নির্যাতনের পর বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এর মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের ত্রাণ পেয়ে খুশি তারা। এর সাথে সাথে মিয়ানমার সরকারের প্রতি যেন চাপ প্রয়োগ করা হয়। তারা যেন নিরাপদে ফিরে যেতে পারে, ওখানে ঠিকভাবে বসবাস করে।

একই দাবি রমিদা খাতুনের। তিনি জানান, খাবার পেয়েছি, আশ্রয় পেয়েছি। মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে যেন মানুষ হিসেবে বসবাস করতে পারি তার ব্যবস্থা করাটাও জরুরি।

মিয়ানমারের মংডু বলিপাড়া থেকে আসা কলিম উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারে আমার অনেক সম্পদ আছে। আমি নিজেই অন্যদের ত্রাণ দিতে পারি। কিন্তু  প্রাণ বাচাঁতে সব ফেলে এদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে আজ নিজেই ত্রাণ নিচ্ছি বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

ত্রাণ হাতে নিয়ে রহিমা বেগম বলেন, আমারা ত্রাণ চাই না, আমরা আমাদের জন্ম ভূমিতে ফিরতে চাই। নিরাপদে মিয়ানমারে বসবাসের প্রতিশ্রুতি চাই। এমন কথা বলেছেন আরো অনেকেই।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সীমান্ত পুলিশের ১২ সদস্য নিহত হয়। ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করে আসছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। এসব রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নটিক্যাল আলিয়া নামের জাহাজ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে মঙ্গলবার মোট এক হাজার ৪৭২ টন ত্রাণ নিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি জেটিতে পৌঁছে। জাহাজ থেকে খালাস করার পর ওইদিন রাতেই ত্রাণ সামগ্রী সড়ক পথে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নিয়ে আসা হয়।