তোমার কাছে আমার অনেক ঋণ; উদভ্রান্ত নাগরিক দিন, রাত্রি নিদ্রাহীন…। শিবনাথ চট্টোপাধ্যায় এর লেখা ও জয় সরকারের সুরে শ্রীকান্তের গাওয়া গানের বাকি কথাগুলোও সকলের জীবনের জন্য অনিবার্য, অকাট্য সত্য। এই জগতে কে ঋণী নয়? সবাই কারো না কারো কাছে ঋণী। সন্তান তার বাবা-মার কাছে ঋণী, ছাত্র তার শিক্ষকের কাছে ঋণী, শিক্ষকও তার ছাত্রের কাছে নানা ভাবে ঋণী, সৃষ্টি তার স্রষ্টার কাছে ঋণী। প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে, বন্ধু তার বান্ধবের কাছে, পথিক ধাবার কাছে, জলধারার কাছে, বৃক্ষের কাছে ঋণী। জীবনের সবটুকুই আসলে নানা ঋণের সুরে বাধা।
ভাগ্য ভালো আমাদের, সবাই বিনিময় চায় না। বিনিময় চাইলে জীবন আমাদের কাছে অতিষ্ঠ ঠেকত। এমন ঋণময় জীবনে অনেকের একটা বড় অংশ কাটে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন দুটি পরিসরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এক নিজের বিভাগ, দুই যার যার ডরমিটরি (হল)। অনেকে হল লাইফে ভালো আবাস পেয়ে আবেশে কাটালেও বিভাগ ‘ভালো’ পায়না। অনেকে বিভাগ ‘ভালো’ পায়, হল ‘ভালো’ পায়না। আলহামদুলিল্লাহ, আমি বিভাগ ও হল দুটোই ভালো পেয়েছিলাম। আমি ২০০০-২০০১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হল এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। চাকরির পরিচেয়ে এখন আমার পরিচয় ‘শিক্ষক’ হলেও ‘ছাত্র’ পরিচয়ের ব্যাপ্তি অনেক বেশি ব্যাপৃত। মরণের আগ পর্যন্ত আমরা সবাই ছাত্র, সুবিশাল এই ব্যাপ্তির মধ্যে ক্ষণজন্মা কেউ কেউ আবার প্রকৃত শিক্ষক হয়ে উঠেন। এই প্রকৃত শিক্ষক হয়ে উঠা আবার সকলের পক্ষে সম্ভব হয়না। তকদিরে কী আছে কেউ জানেনা,কিন্তু চেষ্টা করতে কারোরই কোনো দোষ নাই।
ঢাকা কলেজের অম্লমধুর জীবন শেষ করে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ফরম পূরণ করলাম। ঢাকা কলেজে পড়ে একটা বিপদজনক আত্মবিশ্বাস মনে কাজ করত। ‘আমি চান্স না পেলে কে চান্স পাবে’ টাইপের ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ ধারণা মনে নিয়ে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম কিনলাম। এখন যেমন ঘরে ঝিমুতে ঝিমুতে নিজের কম্পিউটারে, পাড়ার দোকানে কিংবা নীলক্ষেতে চা খেতে খেতে ইন্টারনেট আর মোবাইল এর শক্তিতে ফরম ফিলাপ করা যায় আমাদের তখন এই সুব্যবস্থা ছিলনা। লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম কেনা, লাইনে দাঁড়িয়ে একবার রেজিস্টার ভবন, একবার ব্যাংকে গিয়ে আমাদের ফরম জমা দিতে হত। হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিতে হত তখনকার ছাত্র-ছাত্রীদের।
যাইহোক, দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই চান্স পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে আর জাহাঙ্গীরনগরের ইংরেজি আর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে। মানসিক এবং স্থানিক নৈকট্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। খ ইউনিটে সিরিয়াল সম্ভবত ৫৪৮ ছিল। বড় ভাই শেখ মজলিশ ফুয়াদ এর আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। এক ভাই পড়েছেন, সাংবাদিক হয়েছেন, আবার আমিও সাংবাদিক হব? এ ভাবনা থেকে আমার আরেক ভাই শেখ শাহবাজ রিয়াদ যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং থেকে পাশ করেছেন তিনি বললেন অন্য কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হতে। আব্বার ইচ্ছা ছিল আইনে পড়ব। সিরিয়ালে আইন পাওয়া না যাওয়ায় ভর্তি হলাম সমাজবিজ্ঞানে। ভর্তির কাজ শেষ করে ঢাকা কলেজের নর্থ হোস্টেলের ৩১১ নং রুমে গেলাম লেপ-তোষক আনতে। যার জিম্মায় রেখে এসেছিলাম সে ঠিকমত দেখভাল না করায় উইপোকার আক্রমণে যাদুর শহর ঢাকায় আমার তৎকালীন সব সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যায়।
ওগুলোকে ফেলে রেখে নীলক্ষেত থেকে বালিশ-তোষক-চাদর কিনলাম আর লাল রঙের লেপ সম্ভবত বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলাম। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে তখন মাস্টার্স এর ছাত্র হিসেবে আছেন গ্রামের দেলোয়ার হোসেন আরিফ ভাই। আরিফ ভাইও সাংবাদিকতার ছাত্র ছিলেন। আরিফ ভাইয়ের কাছে গেলাম। ভাই একজনের কাছে পাঠালেন, শাহাজাহান ভাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিলপুরের ছেলে শাহজাহান ভাই অর্থনীতির শেষ বর্ষের ছাত্র, আবার ছাত্রলীগের রাজনীতিও করেন। ভাই সরাসরি আমাকে উনার রুমে তুললেন। অন্যান্য রুমমেটদের মন খারাপ। সাথে আরও একজন রুমে উঠল, আমার বন্ধু রাশেদ। শাহজাহান ভাইসহ আমরা একই রুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনজন। বাকিরা কেউ সাতক্ষীরার, কেউ খুলনার। হলে প্রথমদিন থেকেই ডেমকেয়ার ভাব আমার। তার উপর হলে পেলাম কলেজ জীবনের বড় ভাই আবু আব্বাস ভুঁইয়াকে। আর পায় কে? কোনো ভয়-ভীতি নেই। কোনো চাপ নেই। হল থেকেই সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম ক্লাস করলাম। কোন রং এর পোশাক পড়ে ক্লাসে গিয়েছিলাম আজ কাজের ভিড়ে সে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছি। ক্লাসে গেলাম।
লেকচার থিয়েটারের গ্যালারিতে ক্লাস হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস। মনে নানা উত্তেজনা, চিন্তা, দুশ্চিন্তা। কিন্তু সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অগুনতি ছাত্র-ছাত্রীর ভিড়ে উত্তেজনা উপভোগ করতে ভুলে গেলাম। স্যার ঢুকলেন একজন। আমরা সবাই দাঁড়ালাম। স্যার কী বলে ক্লাস শুরু করেছিলেন আজ আর মনে নেই। স্যারের নাম বলা যাবেনা, স্যার মন খারাপ করবেন। দুইশ’র উপর ছাত্র-ছাত্রী, সবাই কিচির মিচির করছে। স্যারের কোনো ধরনের প্রাযুক্তিক সাপোর্ট নাই। ম্যানুয়ালি কথা বলছেন। সব কথা আজ আর মনে নাই। স্যার মনে হয় জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমরা কেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছি। একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি এনজিওতে চাকরি করব’। কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে হেসে উঠেছিল। আমি হেসেছিলাম কি না মনে করতে পারছিনা। সব মিলে আমার সে ক্লাস ভালো লাগেনি। ভালো না লাগার বিষয়টি ফুয়াদ ভাইকে বললাম। ভাই আমাকে নিয়ে একদিন আরেফিন স্যারের কাছে নিয়ে গেলেন। স্যার ফুয়াদ ভাইকে বললেন, ‘আমাদের বিভাগে ভর্তি করে দাও’। আরেফিন স্যারকে দেখলেই আমার অমিতাভ বচ্চনের কথা মনে হত। একইরকম লম্বা, দারুণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। স্যারকে সালাম দিয়ে ফুয়াদ ভাইয়ের সাথে গেলাম মজিদ ভাইয়ের কাছে। মাস তিনেক পরে মাইগ্রেশনের ফরম ছাড়লে আমাকে আবেদন করতে বললেন। মাইগ্রেশন করে আমি সময়মত সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে গেলাম। সমাজবিজ্ঞানে ব্যাচমেটদের সাথে ঠিকঠাক বন্ধুত্ব হওয়ার আগেই চলে আসলাম। এখানে এসে দেখি সবাই সবার বন্ধু হয়ে গেছে।
প্রথম ক্লাস ছিল রোবায়েত ফেরদৌস স্যারের, ‘যোগাযোগের ধারণাসমূহ’ কোর্সের। আমার প্রথম ক্লাস, কিন্তু অন্যদের ক্লাসতো আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্যার ক্লাসে ঐদিন আর পড়ালেন না কী মনে করে। ‘হিউম্যান কমিউনিকেশন’ নিয়ে নিজের মত করে কিছু লিখতে বললেন। স্যার বললেন, এ লেখার আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন করবেন তিনি, অর্থাৎ মার্কস আছে। আমি সমাজবিজ্ঞান থেকে এসে যোগাযোগের ছাত্র হলাম। আমি আর কী লিখব? এরপরেও চিরাচরিত অভ্যাস থেকে বানিয়ে বানিয়ে লিখলাম। পরের ক্লাসে স্যার যখন খাতা ফেরত দিলেন, দেখি আমি আর আমার আরেক ব্যাচমেট সবচেয়ে বেশী নম্বর পেয়েছি! কয়েকজন ভাবল আমি মনে হয় খুব ভালো ছাত্র! তাদের ধারণা ভালো ছাত্র না হলে, প্রথম ক্লাসে এসেই আমি কীভাবে বেশী মার্কস পেয়ে গেলাম? যতই বলি, আমি নিজের মন আর মগজ খাটিয়ে লিখেছি, ততই তারা অবিশ্বাস করে। আমি যে সুশৃঙ্খল ‘ভালো ছাত্র’ নই সেটা তারা কয়দিন পরেই অনুধাবন করতে পেরেছিল। ঢাকায় এর আগে দুই বছর ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করেও আমি ঢাকার ছেলে হতে পারিনি। নিজের কাছেই নিজেকে ‘ক্ষেত’ মনে হত। বিশেষ করে হলিক্রস, ভিকারুন্নিসা থেকে পড়ে আসা বান্ধবীদের সামনে পড়লে মনে হত, আমি এত ‘ক্ষেত’ কেন?
নানা ফুলের ছবি দিয়ে তখন একধরনের সস্তা শার্ট পাওয়া যেত। নিউমার্কেটে গিয়ে রঙের কাছে মন হারিয়ে সেই শার্ট কিনে একবার বিভাগে গেলাম। ঢাকার বান্ধবীদের দুইজন সে শার্ট দেখে এমন এক হাসি দিল, তাতে মনে হল আত্মহত্যা করি। এত কিছুর পরেও কয়েকজন আমাকে ‘বন্ধু’ করে নিল। বিশেষ করে মফস্বল থেকে আসা কয়েকজন আমার বেশ বন্ধু হয়ে গেল। হীরা, হাসি, মৌসুমি, করবী, ঊর্মিরা আমাকে ভালোই পাত্তা দিত। এমনকি মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে বটতলায় ঝালমুড়ি পর্যন্ত খেয়েছে। একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে লর্ড রাসেল, মুন, মুক্তাসহ আরও কয়েকজন আমাকে বলাকায় সিনেমা দেখার দাওয়াত করল। আমি অবাক। ধীরে ধীরে সবার সাথে ঘনিষ্ঠতা হতে থাকল। একটি ছেলে একটু বেশীই ঘনিষ্ঠ হতে চাইল। এত প্রেম ভালো লাগলো না আমার। কয়দিন পর দেখি, আমার কাছে টাকা ধার চায় সে। বুঝলাম, এর থেকে দূরে থাকতে হবে। সেই ব্যাচমেট থেকে দূরে চলে গেলেও আমি দিন দিন বিভাগের আরও কাছে যেতে শুরু করলাম।
শিক্ষকরা, বিভাগের বন্ধুরা, বড় ভাই-আপুরা আমাকে যেন নতুন জীবন দিল। অল্প সময়ের মধ্যে সবার সাথে তখনো তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি। একদিন এক বিরাট ভুল করে ফেললাম। ভাগ্য ভালো ভাই আমাকে মারে নাই। বারান্দায় দেখি একটি চশমা পড়া ছেলে নোটিশ বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে নোটিশ দেখছে। আমি হল থেকে এসে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আমি ভাবলাম ক্লাসে একা না গিয়ে এই ছেলেকে নিয়ে যাই। দূর থেকে দেখতে ঠিক আমাদের ব্যাচের একটি ছেলের মত। পিঠে একটা জোরে থাপ্পড় দিয়ে বললাম, ‘এই মিয়া কী কর? চল ক্লাসে যাই’। ছেলেটি রাগ হয়ে আমার দিকে ভালোমত তাকাতে বুঝলাম, এ আমার ক্লাসমেট নয়। পরে জেনেছি তিনি ছিলেন বিভাগের বড় ভাই, বশির ভাই। বশির ভাই সেদিন আমার দিকে শুধু তাকিয়েছিলেন। আমি সরি বলে, প্রায় দৌড়ে বারান্দা ত্যাগ করেছিলাম। বারান্দা ত্যাগ করেছিলাম, কিন্তু বিভাগ নয়। ধীরে ধীরে এই বিভাগই হয়ে উঠে আমার নতুন জন্মের গর্ভ।
হলে থাকি, ছাত্রলীগ তখনো হলে আছে। দল এক হলেও দুই গ্রুপ, মামুন গ্রুপ আর বশীর গ্রুপ। শাহজাহান ভাই, আব্বাস ভাই, টুটুল ভাই, নাজমুল ভাই, মামুন গ্রুপ করে। তাই আমার চলাফেরাও তাদের সাথেই হল। প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপে ছিলেন আশরাফ ভাইসহ আরও কয়েকজন। আশরাফ ভাইদের নেতা বশীর ভাই এর মত নিরীহ, ভদ্র মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। কারো সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে শুনিনি। যাইহোক, বিভাগের জীবন একরকম, হলের আরেক রকম। হলে সকালে মিছিলে আসতে হয় , সন্ধ্যায় গেস্টরুমে বন্ধুদের সাথে বসতে হয়। বড় ভাইয়েরা বলে ‘যা দলবেঁধে টিএসসিতে গিয়ে আড্ডা মেরে আয়, গান গাইবি’। সুঠাম দেহের কাজল, রনি ও আমরা প্রথম বর্ষের ছাত্ররা টিএসসিতে যাই, আসি। হলে রাতে ছাদে পাহারা দিতে হয়। এর মধ্যে নির্বাচন এসে গেল। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ হেরে গেল। ভোটের আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। এদিকে হলের পরিবেশ, ক্যাম্পাসের আবহ সব বদলে গেছে। শুনলাম হলের বিছানা-পত্র সব ফেলে দিয়েছে রুমমেটরা। ভাগ্য ভালো সার্টিফিকেটগুলো বাড়িতে ট্রাঙ্কে হেফাজত ছিল। নির্বাচনের পরে আবার ঢাকায় আসলাম। ঢাকায় আসলাম, কিন্তু ক্যাম্পাসে আসতে খুব ভয় লাগলো। ভাইয়ের বাসায় থাকতে লাগলাম। একদিন সাহস করে ক্যাম্পাসে আসলাম। বিভাগে গেলাম। কিন্তু ক্যাম্পাসে খোলা জায়গায় আসলাম না কয়দিন। ধীরে ধীরে একটু সাহস বাড়ল। ভাবলাম, আমার কিসের ভয়। আমি হলের কাউকে মারধর করেছি বা কোনোরকম ক্ষতি করেছি বলে মনে পড়েনা। আমি কাউকে মারিনি, আমাকে কেন মারবে? হলের একদুজনের সাথে কথা বললাম। ওরা বলল, তোমার কিসের ভয়, তুমি আস।
সাহস করে হলে ঢুকে গেস্টরুম পার হতে যাব, তখন দুই/তিনজন আমার পথরোধ করল। গেস্ট রুমে পুরনো আমলের জমিদারের মত ছাত্রদলের এক নেতা বসে আছে। ছেলেগুলো আমাকে তার সামনে হাজির করল। উনি বললেন, ‘তোর বাড়ি কই, নাম কি’? আমি বললাম। আগের রুমমেটদের ডাকা হল। রুমমেটরা আমার নামে অভিযোগ করল, আমি নাকি তাদের সাথে খুব বাজে আচরণ করতাম। রুমমেটদের দু/একজন সম্ভবত শিবির করত। এরা বানিয়ে বানিয়ে অনেক অভিযোগ দিল। ছাত্রদলের কয়েকজন ছেলে আমাকে ধরে চারতলার একটি রুমে নিয়ে গেল। আল্লাহর কী রহমত! মাইর শুরু করবে, এমন সময় ছোটখাট গড়নের কালোমত এক ভাই এসে হাজির হলেন। উনি কেমন করে জানলেন আমার কথা আমি বুঝতে পারিনি। তিনি ছেলেগুলোকে বাধা দিলেন। আমাকে মারধরের শিকার হওয়া থেকে বাঁচালেন। আমাকে উদ্ধার করে হল থেকে বের করে রিকশায় উঠিয়ে দিলেন। যাবার আগে ভাই পরিচয় দিলেন। তিনি যশোরের মামুন ভাই। রিকশায় উঠে শাহবাগ চলে গেলাম। সেখান থেকে আবার ভাইয়ের বাসা টঙ্গি। এর আরও ৬ মাস পরে ছাত্রদলের নেতা আহসানউদ্দিন খান শিপন ভাইয়ের সহায়তায় হলে উঠতে সক্ষম হলাম। শিপন ভাই আমার গ্রামের বড় ভাই। হলে উঠে সবকিছু নতুন করে কিনলাম। পুরো পরিস্থিতি বিপরীত। সেই কঠিন সময়ে আমার একমাত্র ভালোলাগার জায়গা হয়ে উঠল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। বিভাগে গেলেই মন ভালো হয়ে যেত আমার…(চলবে)
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)