কয়েকটি ডেস্কটপ-ল্যাপটপ, একজোড়া মোবাইল ফোন আর কিছু তরুণ সংবাদকর্মী। ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল চ্যানেল আই অনলাইনের যাত্রাটা ছিল খুব ছোট আকারে। তিন বছরের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম দুই বছরে চ্যানেল আই অনলাইন আজ শুধু নিজেদের সংবাদকর্মীর হিসাবেই চারগুণ নয়, অনলাইন সাংবাদিকতায়ও এর প্রভাব বিস্তৃত অনেকগুণ।
এ সময়ের মধ্যে যেমন নতুন নতুন বিভাগ চালু হয়েছে, তেমনি উন্নত হয়েছে সংবাদ পরিবেশনের ধরন। প্রথম দুই বছরে চ্যানেল আই অনলাইন যেমন সবার আগে নির্ভুল সংবাদ দিতে সমর্থ হয়েছে, তেমনি দিতে পেরেছে ভেতরের সংবাদ এবং সংবাদ বিশ্লেষণ। শুরুটা শুধু অনলাইনের নিজস্ব টেক্সট আইটেম এবং চ্যানেল আই টেলিভিশনের ভিডিও দিয়ে হলেও এখন চ্যানেল আই অনলাইন দিচ্ছে মাল্টিমিডিয়ার সব ধরনের কনটেন্ট।
এ কনটেন্টই যেহেতু আগামীর সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার জায়গা সেখানে চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো কী? নিজেদের বর্ষপূর্তির এ সময়ে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সেটা জানতে চেয়েছিল চ্যানেল আই অনলাইন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন: এখন সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় সংকটটা হচ্ছে পেশাদারিত্বের সংকট। তবে এই সংকট একেক জায়গায় একেক রকম। টিভিতে একরকম, অনলাইনে একরকম আর পত্রিকায় আরেকরকম। এসবের মধ্যে থেকে নীতি-নৈতিকতা অনুযায়ী কাজ করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ।
‘এখন অনেকের মধ্যে দ্রুততম সময়ে কাজ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে আর সেটা করতে গিয়ে অনেক সময় তথ্যের যাচাই-বাছাই ঠিকমতো হয় না যেটা খুবই দুঃখজনক।’
পাশাপাশি, তিনি বলেন: তথ্যের সূত্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর দিকেও বাড়তি নজর দিতে হবে সাংবাদিকদের। যে কেউ বললেই সেটা খবর হয়ে যাবে না নিশ্চয়ই। যথাযথ যাচাই-বাছাই করে তবেই নিউজ করা দরকার।
‘আগে গণমাধ্যমে কোন নিউজ এলে সেটা যে পরিমাণ সাড়া ফেলতো এখন সেই জায়গাটা আর নেই। তাড়াহুড়ার চ্যালেঞ্জে যেন দায়িত্বশীলতার বিষয়টি হারিয়ে না যায়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই এখনকার সঠিক সাংবাদিকতার মূল চ্যালেঞ্জ।’
সেই জায়গায় চ্যানেল আই অনলাইনের অবস্থানের ধারণা মেলে পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজের মন্তব্যে।
নিজেদের অনলাইন পোর্টাল বিষয়ে তিনি বলেন: এখন তো মাল্টিমিডিয়ার সময়, সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন, অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া। তাই বলে যে সেই গড্ডালিকা প্রবাহে আমরা মিশে গেছি তা নয়। অনলাইনের সাংবাদিকতায় যেসব নীতি নৈতিকতা মেনে চলতে হয়, চ্যানেল আই অনলাইন সেই জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে আগে থেকেই।
তিনি বলেন, তারপরের কথা হচ্ছে, অনলাইনে যেসব খবর প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় সেসব সমাজকে, জীবনকে ও রাজনীতিকে কতটা প্রভাবিত করে? সবার হাতে হাতে হয়ে যাওয়ায় অনেক গণমাধ্যমে এখন আর দায়িত্বশীলতার আচরণ অনেকক্ষেত্রেই থাকছে না।
‘চ্যানেল আই অনলাইন সেই সব জায়গা অনেক কঠোরভাবে মেনে চলছে,’ বলে মন্তব্য করেন শাইখ সিরাজ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন: মূলত নিউজ বলতে সেসবকেই বোঝায় যেগুলোর অবজেক্টিভিটি থাকে এবং ব্যালান্স থাকে। এখন সেই জায়গায় নীতিগতভাবে অনেকেই থাকতে পারছেন না। সঙ্গে শুরু হয়েছে সাংবাদিকতার কর্পোরেটাইজেশন। তবে সেটা ঠিক যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। আর অপসাংবাদিকতার চাপ তো রয়েছেই।
‘তাই এই সময় সঠিক সাংবাদিকতার মূল চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারা এবং গণমাধ্যমের বিস্তারে পেশাদারিত্ব নিয়ে আসার মধ্যে।’
প্রদীপ কুমার পাণ্ডের মতোই বলছিলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান। নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন তিনি: দুই বছর আগে যখন আমরা চ্যানেল আই অনলাইন শুরু করি তখন মূল লক্ষ্য ছিলো– আমরা দ্রুত খবর দেবো কিন্তু কোনভাবেই ভুল খবর দেবো না।
‘ভুল খবর না দিতে গিয়ে আমরা যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় হই তাতেও কোনো সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন: আমাদের ভাবনায় আর একটি বিষয় ছিলো। সেটা হলো, আমরা যে শুধু খবর দেবো সেটাই না। সাধারণভাবে যে ‘ষড় ক’ সেখানে– কে’র পেছনে কে থাকে, কেন’র নেপথ্যেও কেন থাকে, কীভাবে’র পেছনে আরো বড় কীভাবে থাকে। আমাদের সংবাদে আমরা যখন সেগুলো খুঁজে বের করছি, সেটা বেসিক জার্নালিজমই হচ্ছে, তবে আরো গভীরে ঢুকে তা হচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা।
‘ঘটনা ঘটলেই আমরা সেটার গভীরে চলে যাচ্ছি। প্রতিদিনই যত ঘটনা ঘটছে সেটা নিয়ে আমরা একটা রিসার্চ করি যে কোন নিউজটা আমরা গ্রহণ করবো, কোন খবরটার আরো ভেতরে যাবো আমরা।’
জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন: খেয়াল করলে দেখবেন চ্যানেল আই অনলাইন কোন বিষয়ে কাভার করলে একদম আগাগোড়া কাভার করে। সম্প্রতি হেফাজত নিয়ে মানুষের যতরকমের প্রশ্ন থাকতে পারে সব প্রশ্নের উত্তের দিতে চেষ্টা করেছে। সেখানে চ্যানেল আই নিজের কোন মন্তব্য দেয়নি বরং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যতগুলো পক্ষ রয়েছে সবার মতামত দেওয়া হয়েছে।
‘অনলাইন এখন আর শুধু টেক্সটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। চ্যানেল আই অনলাইন তাই ফোকাস করছে মাল্টিমিডিয়ায়। ভিডিও, সাউন্ড, গ্রাফিক্স, লাইভ সব নিয়েই আমরা কাজ করছি। এটা আমাদের আরেকটি মৌলিক দিক।’
তিনি বলেন: চ্যানেল আই অনলাইনের বয়স এবং অনলাইনের কর্মীদের বয়সও কম হলেও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করা হয়।
চ্যানেল আই অনলাইন যে চ্যানেল আইয়ের সহযোগী, সেই টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদকর্মীরা কীভাবে এর অগ্রযাত্রাকে দেখছেন?
দুই বছর পূর্তির এই সময়ে চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে ‘বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের দ্রুত বিকাশের এই সময়ে সাংবাদিকতা অনলাইনেই বেশি বিকশিত হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যমগুলোও মুদ্রণ মাধ্যম থেকে অনলাইনে চলে যাচ্ছে। কারণ ইন্টারনেটের এত দ্রুত বিকাশ ঘটছে যে এটিকে উপেক্ষা করার কোন উপায়তো নেই-ই বরং এর সর্বোচ্চ সুবিধাটাই এখন গণমাধ্যম নিতে চাইবে।
চ্যানেল আই’র অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর আরেফিন ফয়সল বলেন: চ্যানেল আই অনলাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক– এর সংবাদ বিশ্লেষণ এবং মতামত কলাম।