গত সপ্তাহে ক্যাম্প ন্যুতে একটি ব্যানার এসেছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘তুমি রবে চিরদিন।’ কাকে উৎসর্গ করে এই অভিবাদন, তা লেখা ছিল না। তবু কারো বুঝতে কষ্ট হয়নি এই সম্মান কার জন্য।
এনরিকে এই সম্মানটুকু পেতেই পারেন। তিন বছর বার্সেলোনায় কাটালেন। এই সময়ে বার্সাকে যা দিয়েছেন, তাতে বার্সার সর্বকালের সেরা কোচদের সঙ্গেই তার নাম উচ্চারিত হবে।
কোপা ডেলরে ফাইনাল দিয়ে মেসিদের এনরিকে অধ্যায় শেষ হয়েছে। আলাভেসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে দলটি।
২০১৩-১৪ মৌসুমে বড় কোনও ট্রফি ছাড়াই মৌসুম শেষ করার পর এনরিকেকে দায়িত্ব দেয় বার্সা। পেপ গার্দিওলা চলে যাওয়ার পর মার্টিনো বার্সার কোচ হয়ে আসেন। মার্টিনো যাওয়ার পর আসেন এনরিকে। গার্দিওলা অধ্যায়ের পর বার্সার প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। মার্টিনো সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হন বলেই চাকরি হারান।
এনরিকে ক্যাম্প ন্যুতে পা রেখেই নিজের দর্শন পরিষ্কার করেন, ‘আমাকে গার্দিওলার সঙ্গে তুলনা করবেন না!’ ঠিক পরক্ষণে আবার বলেন, ‘আচ্ছা, যদি তুলনা করেই বসেন, তার মানে হচ্ছে আমাকে কিছু একটা করতে হবে…।’ বছর ঘুরতে না ঘুরতে এনরিকে সেই ‘কিছু একটা’ করে দেখান। ট্রেবল ফিরিয়ে আনেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ৬০টি ম্যাচ খেলেছি। ৫০টিতে জয় পেয়েছি। ড্র চারটিতে। হার ছয়বার। ক্লাবের ইতিহাসে এই পরিসংখ্যানই সেরা।’ এনরিকে ঠিকই বলেছিলেন।
একই সঙ্গে ফুটবল ইতিহাসে বার্সা প্রথম দল হিসেবে দুইবার ট্রেবল জেতে। ফুটবলের ইতিহাসে ট্রেবল জয়ের নজির আছে আটবার।
বার্সা, রিয়ালের কোচ হওয়া মানে বাড়তি চাপের ভেতর থাকা। দলগুলোর সমর্থকরা সব সময় মনে করেন, ট্রেবল না জিতলে কিছুই হলো না। কিন্তু সেটা অসম্ভব। এনরিকে তার দ্বিতীয় মৌসুমে লা লিগা আর কোপা ডেল রে জিতে ডাবল পূরণ করেন। তিন বছরে ৯টি বড় শিরোপা জিতেছেন। এত অল্প সময়ের মেয়াদে এই অর্জন একজন কোচের কাছে গর্ব করার মতোই।
তৃতীয় মৌসুমে এসে এনরিকে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে থাকেন। মিডিয়া থেকেও বারবার তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আর থাকতে চান কি না। এনরিকে এক সময় জানিয়ে দেন, ‘সামনের মৌসুম থেকে বার্সায় আর থাকছি না।’
এনরিকে থাকছেন না। রেখে যাচ্ছেন ঐতিহাসিক কিছু সময়। ৩-৪-৩ ফর্মেশনে পিএসজির বিপক্ষে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ঘুরে দাঁড়ানোর নজির গড়েন তিনি। প্যারিসে ০-৪ গোলে হেরে আসার পর নিজেদের মাঠে ৬-১ গোলের জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। ওই ম্যাচের আগের দিন এনরিকে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের যে কোনও ম্যাচের চেয়ে বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি।’ এনরিকে তার অধীনে এল ক্লাসিকোতেও দাপট দেখিয়েছেন।
শনিবার আলাভেসের বিপক্ষে সাইডলাইনে কিছুটা আপ্লুত দেখা যায় এনরিকেকে। মাদ্রিদের ‘ফ্যান জোন’ থেকে তার নামে জয়ধ্বনি ভেসে আসতে থাকে। এই জয়ধ্বনি শুধু শুধু নয়। এমন একজন কোচের জন্য যিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন পেপ গার্দিওলা এবং জোহান ক্রুইপের ঠিক পরের অবস্থানে থেকে!