শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে অনেক বাসাবাড়ির চুলায় গ্যাস নেই। রান্না হয় না অনেক বাড়িতে। হোটেল থেকে কিনে এনে সকাল-দুপুর-রাতের খাওয়া হয়। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য এটা হয়ত কোনো ব্যাপারই না, কিন্তু যারা সীমিত আয়ের মানুষ, সারা মাস হিসেব করে চলতে হয়, তাদের বেলায়?
যাদের হিসেব থাকে ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ, মাসের বাজার খরচ, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, বাড়ি ভাড়া, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের কাছে গ্যাস না থাকায় বাইরে থেকে কিনে এনে খাওয়া মানে বাড়তি খরচ। এ খরচের হিসেব মেলাতে গেলে মাসের শেষে যোগ-বিয়োগে ঘাটতি দেখা দেবে।
প্রতিবছর শীতের সময় এটা রাজধানীবাসীর সাধারণ চিত্র। গ্যাস আসে রাত ১১টা সাড়ে ১১টায়। চলে যায় ভোরবেলা। তাই কষ্ট হলেও অনেকেই রাতের ওই সময়টায় রান্না করে রাখেন। কি আর করা! খেতে তো হবে।
তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) এইচ এম আলী আশরাফ বলেছেন, গ্যাসের উৎপাদন ঠিকই আছে। শীতকালে গৃহস্থালীতে গ্যাসের ব্যবহার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। অনেকেই দীর্ঘক্ষণ ধরে পানি গরম করেন। এ ছাড়া শহরের দ্রুত বর্ধনশীল এলাকাগুলোতে গ্যাসের সংকট হয়ে থাকে। কারণ আগে যেখানে ৫০টি বাড়ি ছিল সেখানে এখন ৫০০টি বাড়ি হয়েছে।
কিন্তু শুধু কি এটাই কারণ? খতিয়ে দেখা দরকার। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী টিমের লোকজন কি ঠিকমত তাদের দায়িত্ব পালন করছে? নাকি প্রতিমাসে বিরাট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের কাজ তারা বন্ধ করে রেখেছে? বিশেষ করে তিতাস গ্যাসের শ্রমিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী টিমের অনেকেই ঢাকা শহরে গাড়ি বাড়ি করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, এমন অভিযোগ তো আর নতুন নয়।
ঢাকা শহরের এমন অনেক বস্তি এলাকা রয়েছে, যেখানে গ্যাস সংযোগ রয়েছে। দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এসব এলাকায় অন্যান্য আবাসিক এলাকার মত বছরের সব সময় গ্যাস থাকে। কিন্তু কাগজে কলমে এগুলোর কোনো হিসেব পাওয়া যাবে না। কে সংযোগ দিয়েছে, মাসে মাসে চুলাপ্রতি আট শ’ থেকে এক হাজার টাকা করে কারা উত্তোলন করছে, কেউ তার খবর রাখে না।
সরকার বলছে গ্যাসের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই। কথা ঠিক। কিন্তু অবৈধভাবে যে গ্যাস চলে যাচ্ছে, বিনিময়ে একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সে খবর কি সরকার জানছে? অথচ সাধারণ মানুষ মাসে মাসে বিল পরিশোধ করেও গ্যাস পাচ্ছে না, এ রকম কথা প্রচার হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ঠিকই নষ্ট হচ্ছে।
আমাদের দেশে প্রতিটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠান এই সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের অনৈতিকতার কারণে লোকসানের মুখে পড়ছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে সরকারকেই।
দয়া করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কি যাচাই করে দেখবে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের লোকজন তাদের কাজটি ঠিকমত করছেন, নাকি মাসোহারা তুলতে ব্যস্ত তারা। সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে শ্রমিক সংঠনের নাম ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছে, এরকম ব্যক্তির সংখ্যা কত?
দুদক ইচ্ছে করলেই তাদের টিকি ধরতে পারে। শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)