টেলিভিশনের টিকারে দেখলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ‘ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে রাজাকার বলা যাবে না।’ এই আদেশের পর কি বদলে যাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ?
আমাদের এলাকায় একজন চিহ্নিত রাজাকার কমান্ডার ছিলেন পশ্চিম কালুডাঙ্গা গ্রামের ‘খরকু মিয়া’। তাকে এখন এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে মুছে দিতে হবে।
আমার কাছে কিছু দালিলিক প্রমাণ আছে। ওইসব নথিতে (সাইক্লোস্টাইল করা ফরম) বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের নাম পূরণ করে রাজাকারে ভর্তি হয়েছেন, নাম লিখিয়েছেন। তাকে এসডিও সাহেবরা সিল স্বাক্ল করেছিলেন। ওইসব রাজাকাররা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছেন।
কুড়িগ্রামের চিলমাররিতে এমন একজন রাজাকার আছেন যিনি দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যেয়ে হত্যা করেছেন। পঞ্চু মিয়া মিয়া নামে এক রাজাকার ছিলেন, যিনি বন্দুকের নলের সামনেও জয় বাংলা বলেন নাই। নাকে দড়ি লাগিয়ে তাকে মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুদন্ড দেন। এই ইতহাস কি আমাদের প্রজন্ম জানতে পারবে না, পড়তে পারবে না !
মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় আমার চোখের সামনে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর শহরের পাশে আত্রাই নদীর ধারে ফরমান আলী নামে গণহত্যাকারী এক রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে শাস্তি দিয়েছেন। তার নাম কি রাজাকার হিসাবে উচ্চারণ করা যবে না ?
এমন হাজার হাজার রাজাকার আছেন যাদের নামে ট্রাইব্যুনালে মামলা হয় নাই, কিন্তু তারা বেঁচে আছেন। ট্রাইব্যুনালের এই আদেশের পর তারা কি ইতিহাসে এখন রাজাকার হিসাবে চিহ্নিত হবেন না ?
নাকি তারা এখন দাপিয়ে বেড়াবেন আমাদের চোখের সামনে !
এমন হাজারো প্রশ্ন আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)